

সাবধান চারিদিকে ঠগী
আমাদের চারিদিকে অনেক সুখী পরিবার রয়েছে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে সুখী কিনা তারা নিজেরাই জানেন না৷ অর্থ সম্পদে পরিপূর্ণ পরিবার, শিক্ষিত ছেলেদের একটি সরকারী চাকরি নেই তাই হতাশায় তাদের শরীরমন থেকে মহাদুঃখ ছেড়ে যাচ্ছে না৷ ব্যবসায় ভালো উপার্জন হলেও ছেলেরা ভালো রেজাল্ট করছে না তাই অনেকেরই দুঃখ আছে৷ ভালো রেজাল্ট কিংবা সরকারী চাকরির এমন উচ্চাশা রয়েছে বহু মানুষের৷ উচ্চাশা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা করাটা কোনও ভুল নয় কিন্তু হীনমন্যতায় ভোগা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে পরিবারের সদস্যদের অপমানিত করা কিংবা হেয় করা; শুধু ভুল নয়, ভীষণ অন্যায়ও!
সৈকতনগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভবতোষবাবুর গ্রামের বাড়িতে গৃহকর্মে নিপুণা সুন্দরী স্ত্রী - সুভাষিনী, বিধবা মা ও স্কুল-কলেজে পড়া তিন পুত্র সন্তানের বাস৷ ভবতোষবাবু নিজে বেশিদূর পড়ালেখা না করেও বহু পরিশ্রম করে ব্যবসায়ে; অর্থ, যশ ও প্রতিপত্তি অর্জন করেছেন৷ ইদানিং কালে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে-বিদেশে চারিদিকে অর্থনৈতিক মন্দার আবহে তাঁর ব্যবসায় একটু ঘাটতিতে চলছে৷ লাভের অংকের পরিমাণ অনেকটা কমে গেছে৷ করোনা কালে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে৷ ছেলেরাও স্কুল-কলেজে যায় না, অধিকাংশ সময় "বাড়িতে থাকো, সুস্থ থাকো" এই নীতিতে চলতে গিয়ে; 'টিউশনি পড়া আর মোবাইলে গেম খেলা' এই নিয়মেই চলছে৷ প্রায় পুরো বছর যাবৎ বাড়িতে থাকায় এবং একটু একটু বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে ছেলেদের মধ্যে একটু একটু দুষ্টুমি করার মনোভাব এসেছে৷ নতুন মোবাইল কেনা, মোবাইলে গেম খেলা, অপরের মোবাইলে হাত দেওয়া, ভেঙে দেওয়া, নতুন পুরানো জামা কাপড় নিয়ে টানাটানি করা, ছিঁড়ে দেওয়া কিংবা ছোটোখাটো আরো নানা কারণে কখনো কখনো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়াঝাঁটি, হাতাহাতি এমনকি মারামারিও হয়ে যেতে থাকে৷
ভবতোষবাবু ব্যবসায়ী মানুষ ৷ বছরভর অনবরত ব্যবসায়ে লোকসান সহ্য করেছিলেন কিন্তু পড়ালেখায় অমনোযোগী ছেলেদের দুশ্চিন্তায় একেবারে দিশাহারা হয়ে গেলেন৷ সময়ে অসময়ে বন্ধুবান্ধবদের এই দুঃখের কথা বলতে লাগলেন৷ পাশের এক ব্যবসায়ী বন্ধু উপদেশ দিলেন; চারজন ব্রাহ্মণ মহারাজকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মহাযজ্ঞ করলে, বাড়ির সমস্ত দোষ কেটে গিয়ে মহাসুখে জীবনযাপন করতে পারবেন৷ বন্ধুর উপদেশ মতো, ভবতোষবাবু চারজন মহারাজের কাছে গেলেন৷ মহারাজগণ সমস্ত ব্যবস্থা করবেন আশ্বাসও দিলেন৷ তাঁরা বললেন; বাড়ির দোষ কাটাতে গোপনে পূজা ও যজ্ঞ করতে হবে৷ "বিপত্তারিণী, রক্ষাকালী, মহাদেব ও সত্যনারায়ণ" এঁদের পূজা ও যজ্ঞ৷ তাতে যজ্ঞের ঘি লাগবে পাঁচ কেজি৷ অন্যান্য খরচ হবে, মোট বিশ হাজার টাকা৷ টাকা গুলো অগ্রীম দিতে হবে৷ ভবতোষবাবু রাজি হয়ে অগ্রীম পুরো টাকাটাই দিয়ে দিলেন৷ মহারাজগণ শহর থেকে গাড়ি করে এলেন বাড়িতে৷ আত্মীয়দের অনুপস্থিতিতে অনাড়ম্বরভাবে পূজা ও যজ্ঞ শুরু হয়ে গেল৷
বাড়ির সকল সদস্য উপবাস রেখে পূজার্চনায় যোগদান করলেন৷ শুভ্রবসনে সকাল থেকে সারাদিন অভুক্ত থেকে সকলেই ঘৃতাহুতি, মন্ত্রোচ্চারণ, নানান আসন ও ধ্যান মন্ত্রে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত৷ পূজার্চনায় সোনা দানা রাখতে হয়৷ সকল সদস্যগণ সোনার গহনা গলায় ও হাতে পরিধান করে পূজা-যজ্ঞে অংশগ্রহণ করে ছিলেন৷ চার জায়গায় চারজন ব্রতী, তাই যজ্ঞের সমাপ্তির দিকে কেউ কাউকে খেয়াল করতে পারছিলেন না৷ সারাদিনের পরিশ্রমে সবাই অবসন্ন ছিলেন৷ মহাপূজা ও মহাযজ্ঞের শেষে সবাইকে প্রসাদ গ্রহণ করতে বললেন মহারাজগণ৷
রাত্রিশেষে একে একে সুভাষিণীদেবীদের জ্ঞান ফিরতেই অনুভব করলেন; তাদের সকলের গলায়-হাতে থাকা প্রায় কুড়ি ভরি (২০০ গ্রাম) সোনার গহনা নেই৷ এমনিতে করোনায় আত্মীয়-স্বজনের কিংবা পাড়া প্রতিবেশীদের আনাগোনা কম৷ লজ্জায় পুলিশে ডায়েরী করলেন না, সুভাষিণীদেবীরা কেউই৷ করোনা কালে ঠগী মহারাজেরা প্রায় দশ লাখ টাকার সম্পদ লুঠ করে নিয়ে গেল৷ সুখের মহাযজ্ঞ করেও কোনও শান্তি এলো না ভবতোষবাবুর৷ এইভাবে রক্ষাকালী, বিপত্তারিণী, মহাদেব ও বাস্তুদেব সত্যনারায়ণের মহাপূজা জমিয়ে সারলেন ঠগী মহারাজ দস্যুরা৷
বর্তমান যুগের এমনই হাওয়া - ঠগীদের বাদ দিয়ে সমাজের সবাই ভবতোষবাবুকে দোষারোপ করতে লাগলেন৷
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈
