মেদিনীকথার উৎসর্গ খান আবদুল গাফফার খান।

ফাইল চিত্র,

খান আবদুল গাফফার খান

খান আবদুল গাফফার খান নামটা বর্তমানে খুব একটা পরিচিত নাম নয় । তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিন সাড়ম্বরে পালিত হয় না অথচ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিনগুলিতে ভারতের মানুষ তাঁকে চিনতেন ‘সীমান্ত গান্ধী’ হিসেবে । ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অবদুল গাফফার খান ও মহাত্মা গান্ধী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন দেশকে ইংরেজ শাসন মুক্ত করতে ।  
খান আবদুল গাফফার খান ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অহিংসবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ।একজন পাখতুন বংশোদ্ভূত ভারতীয় রাজনৈতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন । পাখতুনদের এই স্বাধীনতাকর্মী ব্রিটিশ রাজকে দেশ ছাড়া করা পর্যন্ত সক্রিয় আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন । তিনি মহাত্মা গান্ধীর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন ।
 তৎকালীন ভারতের উত্তর- পশ্চিম সীমান্তে বিশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রোধে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি প্রচার ও ধারণ করার জন্য তাকে সীমান্ত গান্ধী উপাধী দেয়া হয় বলে ধারণা করা হয় । এছাড়াও তিনি সর্বদাই মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন । তিনি খুদাই খিদমতগার, জাতীয় আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন ।

জন্ম :
৬ ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯০ সাল,উৎমাঞ্জিয়া, পেশোয়ার ।

প্রয়াণ :
২০ শে জানুয়ারি ১৯৮৮ সাল, পেশোয়ার ।

খান আবদুল গাফফার খানের অনেক ডাকনাম ছিল যেমন, ‘ফাখরে আফগান (পাখতুনদের গর্ব), বাদশা খান বা বাচা খান (সকল নেতার রাজা),অনেকে আবার তাঁকে ‘মুসলিম গান্ধী’ বলে বর্ণনা করেছেন ।
১৮৯০ সালের ৬ ই ফেব্রুয়ারি খান আবদুল গাফফার খান অথন্ড ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত শহর উটমানজাইতে জন্মগ্রহণ করেন, যা আজকের পাকিস্তানে অবস্থিত । পেশোয়ার উপত্যকার উৎমাঞ্জিয়া অঞ্চলে এক সচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা বাহরাম খান হস্তনাগরি অঞ্চলের একজন ভূমিপতি ছিলেন । বাবার দ্বিতীয় সন্তান খান আবদুল গাফফার খান সে সময় এলাকার মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এডওয়ার্ডস স্কুলে পড়াশোনা করেন । মেধাবী ছাত্র খান আবদুল গাফফার খান  উপদেষ্টা রেভারেন্ড উইগ্রাম সামাজিক কাজের জন্য শিক্ষার উপযোগিতা ও গুরুত্ব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করেন ও উৎসাহ দেন । স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির একটি রেজিমেন্ট ‘কর্পস অব গাইডস’–এ এক সম্মানীয় পদে তাঁকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় । খান যখন দেখলেন, নিজের দেশেই এমনকি গাইডস অফিসারদেরও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন এই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন । রেভারেন্ড উইগ্রাম তাঁর ভাইকে অনুসরণ করে খানকে লন্ডনে পড়াশোনা করতে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন । এতে তাঁর বাবা রাজি হলেও মা আরও একটি ছেলেকে লন্ডনে পাঠাতে রাজি হলেন না । অগত্যা বাধ্য হয়ে খান আবদুল গাফফার খান তাঁর বাবার জায়গা–জমি দেখাশোনা করতে লাগলেন আর জীবনে কী করা যায়, তাই তিনি ভাবতে থাকলেন ।
খান আবদুল গাফফার খান খুব অল্প বয়সেই দারিদ্র্য দূরীকরণে নিজেকে অঙ্গীকারবদ্ধ করেন এবং সমাজের জন্য শিক্ষা ও সাক্ষরতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন । 
১৯১০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে খান আবদুল গাফফার খান তাঁদের উৎমাঞ্জিয়া গ্রামে একটি মসজিদ-স্কুল খোলেন । ১৯১১ সালে তিনি তুরাংজাইয়ের হাজি সাহেবের ‘পাখতুন স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ যোগ দেন । কিন্তু ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁর মসজিদ-স্কুলটি বন্ধ করে দেয় । এই কাজে বারবার ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাধা পেয়ে তিনি অনুভব করেন, সামাজিক দিক থেকে পরিবর্তন ও উন্নতি সাধন এনে দিতে পারলে বরং পাখতুনদের বেশি উপকার হবে । এভাবেই ১৯২১ সালে ‘আঞ্জুমান-এ ইসলাহ-এ আফগানিয়া (আফগান রিফর্ম সোসাইটি)’ ও ১৯২৭ সালে ‘পাখসতুন জিরগা (পাখতুন অ্যাসেম্বলি)’ নামে একটি যুব আন্দোলন সংস্থার সৃষ্টি হয় । ১৯২৮ সালে মক্কায় হজ করে ফিরে আসার পর তিনি ‘পাকসতুন’ নামে পাখতুন ভাষায় একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ।
১৯২৯ সালের নভেম্বরে খান আবদুল গাফফার খান  ‘খুদায়ি খিদমতগার’ (সার্ভেন্টস অব গড) নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন । এটির সফলতা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ায় । তারা খান আবদুল গাফফার খান ও তাঁর সহযোগীদের কঠোর হস্তে দমন করে । বস্তুত ভারতীয় স্বাধীনতাকামীদের দমন করতে ব্রিটিশ রাজ যে সব শাস্তি দিয়েছে, তাদের মধ্যে নির্মমতম শাস্তি দেওয়া হয়েছে এই গাফফার খান ও তাঁর সঙ্গীদের ।
গাফফার থেকে ‘বাদশা খান’: নিজের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, ব্রিটিশদের সদা দমনমূলক নিষ্ঠুর আচরণ, গোঁড়া মোল্লাদের নির্যাতন এবং পাখতুন সমাজে নিজেদের মধ্যে তীব্র হিংসা ও প্রতিশোধের প্রাচীন সংস্কৃতি লক্ষ্য করে গাফফার খান আবার বুঝতে পারলেন, এই সমাজকে ওঠাতে হলে এখানকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যাপক শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজন । তাঁর নির্মিত উৎমাঞ্জিয়া স্কুলের সাফল্য দেখে প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন লোকজন তাঁকে সমাজসংস্কারের ব্যাপারে আহ্বান জানায় । ১৯১৫ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুরো খাইবার পাখতুনখাওয়ার ৫০০টি গ্রাম ঘুরে পশতুনদের মধ্যে একটি জাগরণ তোলেন । এই কাজে তাঁর এত উত্তেজনা ও পরিশ্রম দেখে লোকে গাফফার খানকে বাদশা (বাচা) খান বলা শুরু করে, যার মানে হলো তিনি সব ট্রাইবাল বা উপজাতি প্রধানদের রাজা । গাফফার খান নিজে একজন ‘সেক্যুলার মুসলিম’ ছিলেন । সাধারণভাবে ধর্ম নিয়ে এবং মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে ভাগাভাগিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না ।
একসময় একটি ‘স্বাধীন ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারত’ দেখার ফর্মুলা গাফফার খানের মনে ঘুরপাক খেতে থাকে এই লক্ষ্যে তিনি ‘খুদাই খিদমতগার’ (ঈশ্বরের দাস) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যেটা সাধারণভাবে ‘সুখ পশ (রেড শার্ট)’ বলে অধিক পরিচিত ছিল । তিনি এই সুখ পস বাহিনীকে গান্ধীর সত্যাগ্রহের মডেলে তৈরি করেছিলেন । এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ সদস্য ছিল । তিনি তাদের বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের এমন একটি অস্ত্র দেব যার নাম সততা ও ধৈর্য । পৃথিবীর কোনো শক্তিই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না ।’
গাফফার খান বারবার বলেছেন যে অহিংসার ধারণাটি কোরানে নোঙর করা হয়েছে এবং জিহাদ বা “পবিত্র যুদ্ধে” একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে ।  তিনি বললেন - “এটি নবীর অস্ত্র, কিন্তু আপনি তা জানেন না । সেই অস্ত্রের নাম ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতা । এই গ্রহের কোনো শক্তিই এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না ।” ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত বিভক্ত না হওয়ার দাবি করে গাফফার খান অন্যান্য মুসলমানরা তাঁকে শত্রু ভাবতে থাকে । যারা একটি স্বাধীন হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান বিভাজনের পক্ষে ছিলেন গাফফার খান তাদের কাছে কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো ।
মহাত্মা গান্ধী ও খান আবদুল গাফফার খান দুজনেই প্রায় সমস্ত কিছুতেই বিপরীত ধর্মী ছিলেন কিন্তু তাঁদের বন্ধুত্ব ছিলো অটুট । গাফফার খান যিনি ছয় ফুটেরও বেশি লম্বা এবং একশ কেজির বেশি ওজনের ছিলেন আর মহাত্মা গান্ধীজি ছোট পাতলা ছিপছিপে চেহারা । গাফফার খান একটি কথা বলার সময় খুব সোচ্চার হতে পারেতেন কিন্তু গান্ধীজি খুব লাজুক এবং নরম স্বভাবের ধীরে ধীরে কথা বলতেন । গান্ধীজি ছিলেন হিন্দু আর গাফফার খান ছিলেন মুসলমান ।  তাদের খুব অস্বাভাবিক বন্ধুত্ব ছিল । 

১৯৩০ সালের ২৩ শে এপ্রিল গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহ কালে গাফফার খানকে গ্রেপ্তার করা হয় । সে সময় ‘খুদাই খিদমতগার’ থেকে একদল জনতা পেশোয়ারের কিসসা খাওয়ানী বাজারে প্রতিবাদ করতে জমায়েত হয় । ব্রিটিশ সৈন্য দল এই নিরস্ত্র জনতার ওপর বেপরোয়াভাবে মেশিনগানের গুলি চালালে ২০০ থেকে ২৫০ লাল শার্টওয়ালা কর্মী নিহত হয় । চন্দ্র সিং গাড়োয়ালের নেতৃত্বে দু প্লাটুন গাড়োয়াল রাইফেল রেজিমেন্টও সেখানে গিয়েছিল । তারা নিরীহ এই জনতার ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করলে তাদের কোর্ট মার্শাল করে কঠিন শাস্তি, এমনকি জেল পর্যন্ত দেওয়া হয় ।

গাফফার খানের সাথে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অহিংস আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনের প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীর বাধাহীন, ঘনিষ্ঠ ও আধ্যাত্মিক যোগাযোগ ছিল । দুজন দুজনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতেন ও তাঁরা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করেছিলেন । দু'জনে একসঙ্গে রাজনীতি, ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতেন এবং একসঙ্গে হাসতে হাসতে বহু ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন । গাফফার খান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুনরায় বিয়ে না করার অঙ্গীকার করেছিলেন । তার অংশীদার হওয়ার জন্য, গান্ধীও কস্তুরবাকে বিয়ে করলেও যৌন সম্পর্ক ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যাতে পুরোপুরি রাজনীতিতে
মনোনিবেশ করা যায় । মহাত্মা গান্ধী এবং গাফফার খান একসাথে একটি দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নিয়েছিলেন, এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল । তারা একটি স্বাধীন, অবিভক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিল - এমন একটি ভারত যেখানে হিন্দু এবং মুসলমান উভয়েই শান্তিতে একসাথে বসবাস করবে ।
‘খুদাই খিদমতগার’, স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রধান দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে কাজ করতে পারে । বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ব্যাপারে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সঙ্গে গান্ধীজির মতভেদ হয়েছিল কিন্তু গাফফার খান বরাবর কংগ্রেসের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন ।
১৯৩১ সালে তাঁকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণের আহ্বান জানানো হলে তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ সৈনিক মাত্র এবং আমি ও ‘খুদাই খিদমতগার’ কেবল আপনাদের সেবায় নিযুক্ত থাকব । তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন বহুদিন । একবার পার্টির যুদ্ধনীতির সঙ্গে একমত না হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন । পরে পার্টি যুদ্ধ নীতি সংশোধন করে নিলে তিনি আবার পার্টিতে ফিরে আসেন । তিনি নারী অধিকারেরও একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন । গান্ধীর অহিংস নীতির একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে তাঁকে ভারতে ‘ফ্রন্টিয়ার গান্ধী’ বলা হয় ।

গাফফার খান ভারত ভাগের তীব্র বিরোধী ছিলেন । কিছু কিছু রাজনীতিবিদ তাঁকে মুসলিমবিরোধী বলে অভিহিত করেন । ১৯৪৬ সালে মারধর করে তাঁর শরীর এমনভাবে জখম করে দেওয়া হয় যে, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল । ১৯৪৭ সালের ২১ জুন দেশ ভাগের মাত্র ৭ সপ্তাহ আগে বান্নুতে গাফফার খান, ‘খুদাই খিদমতগার’–এর সদস্যরা, প্রাদেশিক সভার সদস্যগণ , মিরজালি খান ও উপজাতি প্রধানদের নিয়ে একটি লয়া জিরগা (জনসমাবেশ) বসে । বান্নু রেজুলিউশনে স্থির হয়, ব্রিটিশ টেরিটোরির সব পাখতুন এলাকা নিয়ে ‘পাখতুনিস্তান’ নামে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি এলাকা তাদের দেওয়া হোক । তারা ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান—কারও সঙ্গে যেতে চায় না । কিন্তু ব্রিটিশ রাজ এই দাবি মানতে অস্বীকার করে । কংগ্রেস পার্টিও ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান ও জিন্নাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেওয়ার গান্ধীজির প্রস্তাবটি মানতে রাজি হয় না । এভাবে দেশভাগ ঠেকাবার শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায় । সে জন্য গাফফার খান মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয় মিলেই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে । তিনি মর্মাহত হয়ে তাঁর পূর্বের কংগ্রেস পার্টির সদস্যদের ও গান্ধীজিকে উদ্দেশ্য করে বলেন - ‘তোমরা আমাদের নেকড়ের সামনে ছুড়ে দিলে।’
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা এলো । ভারত এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়, পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হিসাবে স্বাধীনতা অর্জন করে । মহাত্মা গান্ধীজির সাথে একসাথে গাফফার খান তার দৃষ্টিভঙ্গি ধ্বংস হতে দেখেছিলেন । দেশভাগ এবং গান্ধীজির মৃত্যুর পর গাফফার খান পাকিস্তানে থাকতেন ।  তাকে প্রায়ই ভারতপন্থী কর্মী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় এবং জেলে নিক্ষেপ করা হয় । 
যেহেতু দেশভাগ রদ করা গেল না, অতএব ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায় । সেখানে তিনি সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেও তাঁকে নানাভাবে সন্দেহ করা হয় । ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি গৃহবন্দীসহ নানা শাস্তির মধ্যে ছিলেন । এরপর বহুবার তাঁকে কারাগার ও গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয় ।
১৯৬৯ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধীজির শত তম জন্মদিন উপলক্ষে দিল্লী এসেছিলেন এবং ভারতীয় সংসদে ভাষণ দেন ।  তিনি যখন সংসদে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন -
‘আমি গান্ধীর ভূমি দেখতে এসেছি । আমি দেখতে চেয়েছিলাম ন্যায়বিচার ও সমাজতন্ত্রের আদর্শ কী হয়েছে ।’
এই সময়েই তাকে দ্বিতীয় ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল “ফ্রন্টিয়ার গান্ধী,” যার অর্থ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে গান্ধী, আফগানিস্তানের সংলগ্ন অঞ্চল ।

১৯৮৮ সালের ২০ শে জানুয়ারি খান আবদুল গাফফার খান গৃহবন্দী থাকা অবস্থাতেই পেশোয়ারে মারা যান । তার ইচ্ছা অনুযায়ী আফগানিস্তানের জালালাবাদে তাকে সমাহিত করা হয় । তিনি সমগ্র অঞ্চলে এমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিলেন যে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের সময় একদিনের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল যাতে খান আবদুল গাফফার খানকে সমাহিত করা যায় । তাঁর মৃত্যুতে পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের মানুষ শোক প্রকাশ করেন ।
প্রায় ২ লাখ জনতার মধ্যে আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট নজিবুল্লাহও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন । পেশোয়ারের বদলে আফগানিস্তানে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর মৃত্যুর পরে এভাবেই পশতুনরা একদিন এক হয়ে যাবে । তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পেশোয়ারে গিয়েছিলেন ও ভারত সরকার ৫ দিনের শোক দিবস পালন করেছিল ।
তাঁর প্রয়াণের পর সংবাদপত্রের শিরোনামে লেখা হয়েছিলো  ‘ সীমান্ত গান্ধী প্রয়াত হয়েছেন… যাঁর নিজের কোনো সীমান্ত ছিল না ।’

রাজনৈতিক দিক থেকে ক্রমশ সরে আসলে ১৯৮৪ সালে তাঁকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয় । ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক সমঝোতার জন্য তাঁকে ‘নেহরু অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় । ১৯৮৭ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয় ।

২০০৮ সালে নিউইয়র্কে খানের ওপর নির্মিত লেখক -চিত্রকার টি সি ম্যাকলুহ্যানের ‘দি ফ্রন্টিয়ার গান্ধী বাদশাহ খান, এ টর্চ ফর পিস’ শীর্ষক ডকুমেন্টারি বা প্রামাচিত্রের প্রিমিয়ার শো হয় । ২০০৯ সালে এটি বেষ্ট ডকুমেন্টারির মর্যাদা পায় । ১৯৮২ সালে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ ছবিতেও তার চরিত্র দেখানো হয় । ১৯৯০ সালে দিল্লির দূরদর্শনেও ‘বাদশাহ খান, দি ম্যাজেস্টিক ম্যান’ ইংরেজিতে সম্প্রচার করা হয় ।
✍️ সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,পূর্ব মেদিনীপুর

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *