মেদিনীকথার উৎসর্গ কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়।

ফাইল চিত্র,

কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়

কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন উল্লেখযোগ্য নেত্রী । স্বাধীনতার পর ভারতীয় হস্তশিল্প, নাট্যকলাকে পুনরুজ্জীবিত করতে তাঁর নিরলস প্রয়াস অবিস্মরণ । একইসঙ্গে প্রথম মহিলা হিসাবে বিধানসভা ভোটে লড়া । আবার প্রথম মহিলা হিসাবে ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া । বারবার সামাজিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন কমলাদেবী । কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ।

জন্ম:৩ রা এপ্রিল ১৯০৩ সাল ,মাঙ্গালোর, কর্ণাটক।

পিতা:-  আন্নানথায়া ধারেশ্বর
মাতা:-   গিরিজাবা দেবী

দাম্পত্য সঙ্গী:কৃষ্ণ রাও (১৯১৭–১৯১৯)
হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ( ১৯১৯–১৯৮৮)

সন্তান:রামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়

প্রয়াণ :২৯ শে অক্টোবর  ১৯৮৮ সাল।

কমলাদেবী ৩ রা এপ্রিল ১৯০৩ সালে ম্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি তাঁর পিতা মাতার চতুর্থ এবং কনিষ্ঠ কন্যা সন্তান । তাঁর পিতার নাম আন্নানথায়া ধারেশ্বর ও মায়ের নাম গিরিজাবা দেবী । কামালদেবী একজন ব্যতিক্রমী চরিত্রের ছাত্রী ছিলেন এবং খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি দৃঢ়চেতা এবং সাহসী ছিলেন । তার বাবা-মা'র সাথে মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং রামাবাই রানাডে এবং অ্যানি বেসন্তের মতো মহিলা নেতাসহ অনেক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের বন্ধুত্ব ছিল ফলে ওনাদের সান্নিধ্য তরুণ কমলাদেবীকে স্বদেশী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য উৎসাহী করে তুলেছিল ।
কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের ১৯১৭ সালে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় কৃষ্ণ রাওয়ের সাথে , কিন্তু বিয়ের দু-বছর পরে তিনি বিধবা হন । তারপরে চেন্নাইয়ে রানী মেরি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন । সেখানে সুহাসিনী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কমলাদেবীর পরিচয় হয়, যিনি সরোজিনী নাইডুর ছোট বোন ও ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টির নেত্রী ছিলেন । সুহাসিনী ছিল কমলাদেবীর সহপাঠি, পরবর্তী সময়ে তিনি কমলাদেবীকে তার প্রতিভাবান ভাই হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন । হরীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি-নাট্যকার-অভিনেতা । অবশেষে, যখন কমলাদেবীর বিশ বছর বয়স, তখন হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে হয় । বিধবা অবস্থায় বিবাহের lফলে নানা সমসযার সম্মুখীন হতে হয় । পরের বছরে তাদের একমাত্র পুত্র রামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন ।
বয়স যখন ২০ তখন সরোজিনী নাইড়ুর ভাই হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিণয় হয়েছিলো । সেইসময়ে বিধবা বিবাহ এক ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ ছিল । তবে নিজেদের একই ভাবনাকে পাথেয় করে দুজনে একসঙ্গে অনেকদিন পথ চলেছিলেন । ফের বহুবছর পরে হরীন্দ্রনাথের সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় । সেক্ষেত্রে কমলাদেবীই ফের ছক ভেঙে বিচ্ছেদের আবেদন করেন ।

বিবাহের অল্পসময় পরে, হরীন্দ্রনাথ লন্ডন ভ্রমণে চলে যান এবং কয়েক মাস পরে কামালদেবীও তার সাথে যোগ দেন । সেখানে গিয়ে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেডফোর্ড কলেজে ভর্তি হন এবং পরে সমাজবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা অর্জন করেন ।
লন্ডনে থাকাকালীন কমলাদেবী ১৯২৩ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তিনি অবিলম্বে দেশের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত গান্ধী সংগঠন সেবা দলে যোগদান করার জন্য ভারতে ফিরে আসেন । এই দলের মাধ্যমে নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে একত্রিত করেন ।
১৯২৬ সালে তিনি মাদ্রাসের প্রাদেশিক বিধানসভায় অংশ নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স (এআইডাব্লিউসি) এর প্রতিষ্ঠাতা মার্গারেট ই ক্যাসিন্সের সাথে সাক্ষাৎ করেন । এভাবে তিনি ভারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রথম মহিলা নেত্রী হয়েছিলেন । যদিও তিনি কয়েকদিনের জন্য প্রচার চালাতে পেরেছিলেন এবং তিনি ৫৫টি ভোটের পার্থক্যে হেরেছিলেন ।
অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স সম্পাদনা
পরের বছর তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স (এআইডাব্লিউসি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার প্রথম সংগঠনিক সচিব হন । পরবর্তী কয়েক বছরে, এআইডাব্লিউসি-এর শাখা এবং স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি সহ, সম্মানিত জাতীয় সংগঠন হয়ে উঠে এবং এর মাধেমে আইনি সংস্কারের জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে ।
একইসঙ্গে প্রথম মহিলা হিসাবে বিধানসভা ভোটে লড়া । আবার প্রথম মহিলা হিসাবে ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া । বারবার সামাজিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন কমলাদেবী যা তৎকালীন সময়ে খুবই বিরল ঘটনা।
বলা বাহুল্য, শুধু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখার জন্যই যে কমলাদেবীকে মনে রাখতে হবে, এমন নয় তিনি ভারতীয় হস্তশিল্পের যে জোয়ার একসময় এসেছিল, তার সূচনাও কিন্তু কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হয়েছিলো । হস্তশিল্পের পাশাপাশি হ্যান্ডলুম ও থিয়েটারের উৎকর্ষতার পিছনে কমলাদেবীর অবদান অবিস্মরণীয় । একই সঙ্গে ভারতীয় সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি ।
শুধু তাই নয়, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে মহিলাদের মানোন্নয়নেও তিনি বরাবর চেষ্টা করে গিয়েছেন ।
কমলাদেবী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশের মহিলাদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন নারীদের উন্নয়নের জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন । তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সামগ্রিক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয় ।

ভারতীয় থিয়েটারের নবজাগরণে তিনিই ছিলেন অগ্রদূত । দিল্লির প্রখ্যাত থিয়েটার কর্মশালা ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠার পিছনে তাঁর স্বপ্নই পথ দেখিয়েছে । ভারতীয় পণ্য নিয়ে ব্রিটিশ ভারতে আন্দোলন, থিয়েটার নিয়ে স্বাধীন ভারতে আন্দোলন কমলাদেবীকে স্মরণীয় করে রেখেছে । 

তিনি নিজে হাতে গড়ে তুলেছেন সেন্ট্রাল কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এম্পোরিয়াম, কারুশিল্প সংসদ । এহেন সমাজ সংস্কারককে তো সম্মাননা জানাতেই হয় । সংগীত নাটক অ্যাকাডেমির ফেলোশিপ প্রাপকের তালিকার প্রথমেই রয়েছে কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের নাম । ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ মিউজিক, ড্যান্স, ড্রামার তরফেও এসেছে সম্মানও । ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, ক্রাফ্টস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া তারই মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছে । ১৯৭৪ সালে তাঁকে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ দেওয়া হয়ে ।

শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম বা সমাজ সংস্কার, নাটক, থিয়েটারের মধ্যে তাঁর প্রতিভা সীমাবদ্ধ থাকেনি তিনি অনেক বইও লিখেছেন । জাপানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি । বইতে সেদেশের দুর্বলতা ও শক্তি নিয়েই আলোচনা করেছেন । আঙ্কল স্যামের রাজত্ব, চিনের যুদ্ধ । একটি একটি করে তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয় ।

কমলাদেবী নারীমুক্তি সহ অনেক বইসমুহ সম্পাদনা করেন । তাঁর উল্লেখযোগ্য বই গুলি হলো.....

✍️ভারতীয় নারীর সচেতনতা ।
✍️জাপান-এর দুর্বলতা ও শক্তি ।
✍️স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় নারী যুদ্ধ ।
✍️ভারতীয় কার্পেট এবং মেঝে কভার ।
✍️ভারতীয় সূচিকর্ম ।
✍️ভারতীয় লোক নৃত্যের ঐতিহ্য ।
এছাড়াও আরও অনেক বই তিনি লিখেছেন।

ভারত সরকারের বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয় কমলাদেবীকে । ভারত সরকার ১৯৫৫ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৮৭ সালে পদ্মা ভুবনে সম্মানিত করে, যা ভারতের প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে শ্রদ্ধাশীল বেসামরিক পুরষ্কারের মধ্যে অন্যতম । তিনি ১৯৬৬ সালে কমিউনিটি লিডারশিপের জন্য রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন । ১৯৭৪ সালে, তার জীবনকালের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ,তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমী ফেলোশিপ রত্ন সাদাস্যাকে ভূষিত করেন ।
✍️ সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,পূর্ব মেদিনীপুর

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *