মেদিনীকথার উৎসর্গ কবির কলমে মুন্সী প্রেমচাঁদ।

ফাইল চিত্র,

মুন্সী প্রেমচাঁদ (ছদ্মনাম-ধনপত রায় শ্রীবাস্তব)

জন্ম - 31.07.1880 মৃত্যু - 08.10.1936
পিতা-অজায়ব রায়। 
মাতা-আনন্দীদেবী

       ঊনবিংশ শতাব্দীকে ভারতবর্ষের স্বর্ণ প্রসূতি শতাব্দী বলা হয়ে থাকে। কি সাহিত্যে,কি বিজ্ঞানে, কি রাজনীতিতে,কি খেলাধুলায়, কি দেশপ্রেমে, কি আত্মত্যাগে-বলতে গেলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতগণ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পেরেছিলেন। একথা ঠিক এই সময়টা বাংলার, বাংঙ্গালীর মহিমা সূর্য্য ভারতের আকাশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বকে দীপ্ত করেছিল। আজ বাংলার বাইরের একজনকে উপস্থাপন করতে চলেছি যিনি বাঙ্গালী না হয়েও বাঙ্গালীর আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি মুন্সী প্রেমচাঁদ।

       বারাণসী থেকে সাত কিলোমিটার দূরে লহমী গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা নামে ধনপত হলেও ধনী ছিলেন না।তারপর আট বছরে মাতৃবিয়োগ,ষোল বছরে পিতৃবিয়োগ, পনর বছরে বিবাহিত-স্ত্রী শুধু কুরূপাই নন, অত‍্যন্ত কর্কশ স্বভাবের একগুঁয়ে মেয়ে।ফলে শিক্ষাদীক্ষা তেমন হওয়ার কথাই নয়।
কিন্তু প্রেমচাঁদও কম জেদী নয়, তবে অবশ‍্য দৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। ছয় কি.মি.হেঁটে পড়তে যাওয়া হোক্ কিংবা ওরই মধ‍্যে টিউশানি করে সংসার চালাতে হোক্, পড়াশোনাটা ঠিকই করছেন।টিউশানের আয় পাঁচ টাকার মধ‍্যো তিন টাকা সংসার খরচ বাকী দুই টাকা পড়াশোনায় ব‍্যয় করে বি.এ.পর্যন্ত পাড়া ছাড়াও কতগুলো সাটিফিকেট কোর্শও সম্পূর্ণ করে শিক্ষকতার কাজ ছুটিয়ে নেন। পরে সাব ইন্সপেক্টর অফ্ স্কুলস্ও হন।

       তিনি  ভারতের হিন্দী-উর্দু-আধুনিক কথা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ও পথিকৃৎ বলা চলে।
তাঁর লেখনী তৎকালীন সমাজ ব‍্যবস্থায় সংস্কার হীনতা, সাম্প্রদায়িকতা,জাতপাত, শোষণ,বঞ্চনা, অসাম‍্য,নারী নির্যাতন ইত্যাদির বিরূদ্ধেই কেবল শাণিত হয়নি ইংরেজ শাসকের শোষণ ও অন‍্যায়ের বিরূদ্ধে কম শাণিত ছিল না।একারণে তাঁকে বেশ কয়েক বার জরিমানাও দিতে হয়েছে, প্রকাশ নিষিদ্ধ হয়েছে, পুস্তক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু কলম থেমে থাকেনি।

   শেষপর্যন্ত তিন জনে মিলে একটি প্রেসও স্থাপন করেন।কিন্তু প্রচুর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারেন নি।এরপর বাধ‍্য হয়েই বিভিন্ন প্রত্রিকায় সম্পাদনার চাকরি নিতে বাধ‍্য হন বলা ভালো এতে তাঁর মঙ্গলই হয়। (সাহিত‍্যিক কদাচিৎ ব‍্যবসায়ী হয়।)এরফলে তিনি সাহিত্য সেবা নিপুণভাবে করার সুযোগও পান। সম্পাদনার অভিজ্ঞতা থেকে পরে নিজস্ব পত্রিকা 'হংস' ও সাপ্তাহিক পত্রিকা 'জাগরণ' প্রকাশ করেন। দেশাত্মবোধক লেখার অপরাধে,যে সময়ে ধানের মন আট টাকা, সে বাজারে তাঁকে 1000টাকা জরিমানা দিতে হয়।এই রকম জরিমানা দিতে গিয়ে নিঃস্ব ও ঋণী হয়ে পড়েন। মৃত্যুর দু'বছর আগে 750 টাকার মাসিক বেতনে গল্প লেখার শর্তসাপেক্ষ চাকরি নিতে বাধ‍্য হন। এতে তাঁর আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয় বটে কিন্তু সে সুখ বেশী দিন  সইল না। প্রচণ্ড পরিশ্রমে অসুস্থ ছিলেনই তার পর কে জানে আর্থিক স্বস্তি এলেও মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল কিনা, দু'বছরের মধ‍্যেই চিরকালের জন্যে পরপারের চিরস্থায়ী নিয়োগপত্র হাসিল করে নিলেন।

   তের বছর বয়সে রক্ষক মামাকে কেন্দ্র করে যে 'অপাপ‍্য' লেখা প্রকাশিত হয়েছিল তা ছাপান্ন বছর বয়সে 'গোদানে' গিয়ে শেষ হল, না শেষ হলো ঠিক বলা যায় না এরপরেও অসম্পূর্ণ 'মঙ্গলসূত্র' উপন‍্যাস ছিল।
     
     সমকালীন ক্ষেত্রে তিনি কথা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
তাঁর রচনায় নাটক,জীবনী,উপন‍্যাস, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ থাকলেও তিনি তাঁর ছোটো গল্পগুলির জন্য সমধিক খ‍্যাত।

   অনেকেই তাঁর গল্পের অনুকরণ করেছেন।
 'দুধের দাম','মন্দির', 'সওয়া সের গম', 'তাগাদা',
'বিধ্বংস'  'ত্রিশূল',  'ধর্মযুদ্ধ', 'মেটেরাম শাস্ত্রী', 'রসিক সম্পাদক'  'ইত‍্যাদি তাঁর বিখ‍্যাত গল্প।

      বাঙ্গালী না হয়েও যিনি বাঙ্গালীর আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তাঁকে মেদিনিকথার তরফ থেকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।ওঁ।
✍️ শীর্ষেন্দু দাস
( প্রাক্তন শিক্ষক )

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *