মেদিনীকথার উৎসর্গ বাটুকেশ্বর দত্ত।

ফাইল চিত্র,

বিপ্লবী বাটুকেশ্বর দত্ত

বাটুকেশ্বর দত্ত উনিশের দশকের গোড়ার দিকের একজন বলিষ্ঠ বিপ্লবী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ১৯২৯ সালের  ৮ ই এপ্রিল দিল্লির কেন্দ্রীয় আইনসভায় ভগৎ সিংয়ের ও বাটুকেশ্বর দত্ত মিলে  দুটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিলেণ। তার ফলে তিনি সকলের কাছে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন । তাদের গ্রেপ্তার করা , বিচারের পর তার যাবজ্জীবন কারাবাস বরণ করেন ।  তিনি হিন্দুস্তান সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও ছিলেন।

 বাটুকেশ্বর দত্ত (বটুকেশ্বর দত্ত)

 জন্ম:
 ১৮ ই নভেম্বর ১৯১০ সাল, খন্দঘোষ, পূর্ব বর্ধমান ।

মৃত্যু :
 ২০ শে জুলাই ১৯৬৫ সাল, নতুন দীল্লি ।
 
বাটুকেশ্বর দত্তকে আমরা বিভিন্ন নামে পাই  বটুকেশ্বর দত্ত, বি কে দত্ত, বাট্টু, এবং মোহন নামেও পরিচিত ছিলেন । তিনি ছিলেন বিহারী দত্তের পুত্র । তিনি ১৯১০ সালের ১৮ ই নভেম্বর পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্দঘোষ গ্রামে বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।  তিনি কানপুর পণ্ডিত পৃথি নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন ।
কানপুরে কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগ দেন । বিপ্লবী সদস্যদের নিকট বি.কে নামে পরিচিত ছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত ।
তিনি চন্দ্রশেখর আজাদ এবং ভগৎ  সিংয়ের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন । বাটুকেশ্বর দত্ত হিন্দুস্তান সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের  কাজ করার সময় বোমা তৈরির কৌশলের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন ।

ভগৎ সিংদের  মতো বিপ্লবীদের উত্থানকে দমিয়ে রাখতে, ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া আইন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল , যেখানে পুলিশকে একটি মুক্ত ভাবে কাজ করবার অধিকার  দিয়েছিল  । হয়ে ভগৎ সিং কেন্দ্রীয় বিধানসভার ভিতরে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাতে সকলের সম্মতি দিয়েছিলেন ।  প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে  বাটুকেশ্বর দত্ত এবং সুখদেব বোমাটি লাগাবেন এবং ভগৎ সিং  বাইরে ঘোরাঘুরি  করবেন কিন্তু  পরে তাদের ঐ  পরিকল্পনাটি পরিবর্তন করা হয়েছিল । বাটুকেশ্বর দত্ত  ও ভগৎ সিংয়ের উপর এই বোমা লাগানোর দায়িত্ব ভার দেওয়া হয়েছিল । ১৯২৯ সালের ৮ ই এপ্রিল , মিঃ প্যাটেল যখন জননিরাপত্তা বিলের উপর রায় দেওয়ার জন্য উঠে পড়লেন, জর্জ শুস্টারের আসনের কাছে ভিজিটার গ্যালারীর কাছে ছুটে এসে দুটি বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন ভগৎ সিং ও  বাটুকেশ্বর দত্ত । বোমা থেকে বেরোনো ধোঁয়ায় সারা হল ভরে ওঠেল  এবং তাঁরা চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে উঠলো "ইনকিলাব জিন্দাবাদ !" ("বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ") এবং সাথে সাথে কিছু লিফলেট ছড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন । লিফলেটে দাবি করা হয়েছে যে এই আইনটি বাণিজ্য পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় পরিষদে উপস্থাপন করা জন সুরক্ষা বিল এবং লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর বিরোধিতা করার জন্য তারা এই পথ গ্রহণ করেছেন  । এই  বিস্ফোরণের সময় স্যার জে সাইমনও রাষ্ট্রপতির গ্যালারিতে ছিলেন । স্যার জর্জ শুস্টার, স্যার বি দালাল, মিঃ রাঘবেন্দ্র রাও এবং মিঃ শঙ্কর রাও সহ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন  এই বিস্ফোরণে । তবে কারো কোনও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি ।  ভগৎ সিং ও  বাটুকেশ্বর দত্ত দাবি করেছিলেন যে এই কাজটি তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই করেছেন । ইংরেজরা  ভগৎ সিং ও  বাটুকেশ্বর দত্তকে  পরিকল্পনা অনুসারে গ্রেপ্তার করেছিলেন ।

দশ মিনিট পরে অধিবেশন পুনরায় শুরু হয় । মিঃ প্যাটেল পরবর্তী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সভা স্থগিত করে দিয়েছিলেন । সম্মানিত প্রধান বলরাজ স্বাক্ষরিত একটি লাল পত্রিকা "হিন্দুস্তান সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিকান আর্মি" জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল ।

ভগৎ সিংহ ও সুখদেব থাপার এর পাশাপাশি  বাটুকেশ্বর দত্তর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংসদ বোমা মামলায় বিচার হয়েছিল এবং ১৯২৯ সালে দিল্লির দায়রা জর্জ তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারা এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৪ ধারায় আজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন । এবং  তাদেরকে সেলুলার জেলে , আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল ।

গ্রেপ্তারের পর বিস্ফোরক আইন ভঙ্গ ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রহসন করে ব্রিটিশ সরকার । জেলে তিনি এবং ভগৎ সিং ভারতীয় রাজনৈতিক জেলবন্দিদের সাথে নোংরা আচরণের বিরুদ্ধে ও রাজবন্দীর অধিকারের দাবীতে এক ঐতিহাসিক অনশনের উদ্যোগ নেন এবং তারা অনশন শুরু করেন । তাদের জন্যই  কিছু অধিকার আদায়ে সক্ষম হন । এই অনশনেই  শহীদ হন বিপ্লবী যতীন দাস । ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বটুকেশ্বর মুক্তি পেলেও বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় । ১৯৪২ সালে আবার গ্রেপ্তার করে তাকে অন্তরীন রাখা হয় ৩ বছর । 

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে বাটুকেশ্বর দত্ত  যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল । তবুও তিনি মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং আবারও চার বছর জেল খেটেছিলেন ।  তিনি মতিহারি জেলে বিহারের চম্পারান জেলায় ছিলেন । 

ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পরে , ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে তিনি বিয়ে করেন । তাঁর স্ত্রীর নাম অঞ্জলি ।বিবাহ করে বিহারের পাটনায় বসবাস করতেন । সরকারি সাহায্য বা সম্মান বিশেষ কিছু পাননি ।
এই মহান বিপ্লবীকে স্বাধীন ভারত  কোনও স্বীকৃতি দেয়নি স্বাধীন ভারতে তার কোনো  মূল্যায়ন হয়নি ।তিনি তাঁর বাকী জীবন দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে জীবন কাটিয়েছিলেন । তিনি অনেক আক্ষেপ নিয়ে  রাজনৈতিক আলো থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন ।  মুক্তিযোদ্ধার পরবর্তী জীবন ছিল খুবই বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক । 
যক্ষ্মার কারণে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ায় স্বাধীন ভারতে তার কদর হয় না , তিনি সেই সময় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন ।  জীবিকা নির্বাহের জন্য তাকে শেষমেশ পরিবহণের ব্যবসা শুরু করতে বাধ্য করা হয়েছিল ।

এই সর্বস্বত্যাগী বিপ্লবীর শেষ জীবন বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক । দারিদ্রের সাথে লড়াই করে জীবন কেটেছে । দীর্ঘ অসুস্থতার পরে ১৯৬৫ সালের ২০ শে  জুলাই দিল্লির এইমস হাসপাতালে মারা যান ।
পাঞ্জাবের ফিরোজপুরের নিকটে হুসেনিওয়ালাতে তাঁর শেষকৃত্য করা হয়েছিল যেখানে তার সহযোদ্ধা ভগত সিং, রাজগুরু এবং সুখদেবের মরদেহও বহু বছর আগে দাহ করা হয়েছিল ।

তাঁর একমাত্র কন্যা, ভারতী দত্ত বাগচী, পাটনাতে থাকতেন । তাঁর বাড়ি জাক্কানপুর এলাকায় তিনি ছিলেন শহীদ (১৯৬৫) চলচ্চিত্রের অন্যতম লেখক ছিলেন। শহীদ চিত্রগ্রহণের সময় একবার প্রধান অভিনেতা মনোজ কুমার ভগৎ সিংয়ের মায়ের সাথে দেখা করতে যান, কারণ তখন তাঁর শরীর ভাল ছিলেন না এবং চণ্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ।  মনোজ কুমারের সাথে  সেখানে বটুকেশ্বর দত্তের সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো । 

বি.কে.  নয়া দিল্লির দত্ত কলোনী, সাফদারজং বিমানবন্দরের ঠিক সামনে এবং জোড়বাগ সংলগ্ন একটি প্রধান অবস্থানে অবস্থিত, দত্তের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিলো।  এটি এনডিএমসি অঞ্চলের এইমসের নিকটবর্তী নিকটতম বেসরকারী আবাসিক কলোনী।

অনিল ভার্মা বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং কে নিয়ে সহোগী নামে একটি বই লিখেছিলেন , যা বাটুকেশ্বর দত্তর  জন্মের শতবর্ষে প্রকাশিত হয়েছিল ।  বইটি প্রকাশ করেছে ভারত সরকার প্রকাশনা পরিষেবা, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট। 

ভাস্বর চ্যাটার্জি দ্য লেজেন্ড অফ ভগত সিং (২০০২) ছবিতে বাটুকেশ্বর দত্ত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
✍️ সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,

পূর্ব মেদিনীপু

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

1 thought on “মেদিনীকথার উৎসর্গ বাটুকেশ্বর দত্ত।”

  1. A month ago, when a 37-year-old esoteric of a Singapore boarding secondary high principles after people with mental disorders was diagnosed with a coronavirus, the governance of the inauguration did not draft a panic. Overwhelming into account the specifics of the fundamental sense of right, all its shillelagh and most of the tenuous haleness inhabitants were vaccinated against Covid-19 as being at jeopardy uphold in February-March. Anyway, high-principled in magnificence, the boarding devotees was closed in compensation quarantine, and all employees, patients and other people who recently communicated with the repulsed spouse or her nurture were quarantined and began to be regularly tested. Excessive the next week, the virus was detected in three dozen people, including the 30-year-old sister to off with from the Philippines, as okay as four other employees of the boarding day-school and 26 of its indefatigable residents. Most of those infected were fully vaccinated against Covid-19… You can implication at to another article on this plot at this relationship https://gear4music.rabatt.fun Sorry to interrupt, but I’d like to suggest a different solution..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *