ফাইল চিত্র,


( প্রাক্তন শিক্ষক )
শ্রী শ্রী মা সারদামণি দেবী
জন্ম - 22.12.1853 মৃত্যু - 21.07.1920
পিতা-রামচন্দ্র মুখ্যোপাধ্যায়।
মাতা-শ্যামাসুন্দরী দেবী।
স্বামী-রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।
'থাকতে এলুম তোমাদের বাড়ী' রামচন্দ্রে স্বপ্নে কয়
পত্নীরে কন, 'আসছেন লক্ষ্মী জগতের আশ্রয়'।
উত্তরায়ণের শুরু যবে কৃষ্ণা সপ্তমী ধরে
সারদা হলেন অবত্তীর্ণ বৃহস্পতি বারে।
'জয়রামবাটির রাম মুখুর্জ্যের বাড়ীতে যাও চলে,
দেখবে সেথায় বিয়ের কনে কুটোটি বাঁধা আছে'।
পাঁচ বছরের সারদার বিয়ে,বাইশ বছরের ঠাকুর
জয়রামবাটি পড়ল বাঁধা সাথে কামারপুকুর।
বাপের বাড়ী জয়রামবাটি ছেড়ে কামারপুকুর,
দক্ষিণেশ্বরে সারদা চলেন, আছেন যেথা ঠাকুর।
একবার পথে সঙ্গীসাথী সব এগিয়ে গেলেন বেশ
তেলেভেলের প্রান্তর মাঝে আলোর রেখাও শেষ।
দীর্ঘকায় ঝাঁকড়া চুল রক্তবরণ আঁখি
কৃষ্ণকায়ের হাতে দীর্ঘ পাকানো বাঁশের লাঠি
'কে যাও তুমি? কোথায় যাবে?' বাজখাই কণ্ঠস্বরে।
সরদা কন, 'পথ হারিয়েছি, সঙ্গীরা গেছেন ফেলে।
বাবা, তোমার জামাই থাকেন সিদ্ধ দক্ষিণেশ্বরে
যাচ্ছি সেথায়। মাগো! কৃপায় এসে বাঁচালে মোরে।'
ডাকাত বাপের মায়ের স্নেহ উছলে ওঠে কত
ভুলিয়ে দিতে পথের ক্লান্তি গাইলেও গান শত।
কন্যা পেয়ে ডাকাত মায়ের সোহাগ কে বা দেখে
মেজের 'পরে আঁচল পেতে ঘুম পাড়াতে থাকে।
বিদায় বেলায় পথের পিতার মাতার অশ্রু ঝরে
স্বর্গ তখন মরলোকের সেই তারকেশ্বরে।
উত্তরে পুরি ঠাকুরে কন, 'ব্রহ্মে নিষ্ঠা হ'লে
থাকলেও স্ত্রী সদাই কাছে বৈরাগ্য কি টলে?'
'আমায় দেখো কেমন চোখে' সারদার প্রশ্নে কন
'মন্দিরের মা ও পদসেবীতে ভিন্ন কিছুই নন।'
ষোড়শী পূজায় পরমপুরুষ করেন তাঁরে পূজা
কন, 'এক নয়,আসছে অসংখ্য সন্তানেরা সোজা'।
'লক্ষীনারায়ণের অযুত দান নেবে কি সারদা বলো?'
'সরদার নেওয়া তোমারই নেওয়া সমান কথাই হোল।'
ঠাকুর কন, 'সিদ্ধি সব ওঁরই, কাঁদবে যাও তাঁর কাছে'
কালী ঘোষের গৃহিণী আসে ফিরে ফিরে মায়ের পাশে।
শেষে বেলের পাতা প্রসাদী করে দিলেন তাঁর হাতে।
লম্পট কালীর কি যে হলো ফিরল ভক্তি পথে।
'কিলবিলিয়ে ঘুরছে মানুষ আশাহত পথে পথে
এ শরীর আর কি করেছে?তুমি নেবে সব সাথে।
কামারপুকুর ফিরেই যেও, শাকতলাটি বুনো,
হরিনামের বৈঠা বেও, হাত উপুড় না জেনো।'
নাগ মশাই ঠুকছে মাথা রক্ত পড়ে ঝরে
মায়ের মন কি থাকতে পারে?ডেকে নিলেন তারে।
বেহুঁশ হয়ে পড়েন এসে মহাভাবের ঘোরে
হাত বুলিয়ে চেতন করে খাওয়ান স্নেহ ভরে।
নাগ করেন, 'নাহং নাহং তুহুঁ তুহুঁ' রব
পায়ের কাছে নামিয়ে দিলেন জঞ্জালের গৌরব।
'অমন ক'রে খেতে দিলে পেট কি কারু ভরে?
অবহেলায়, সরে দাঁড়িয়ে, সোহাগ ঠেলে দূরে।
ওরে আমজাদ!পুত্রটি মোর পাইনে কেন দেখা?
বরাবরই জানতেম, তোমার ডাকাতি আছে শেখা।'
ডাকাত হৃদয় ডাকাতি হলে যায় কি তারে রোখা?
'আমি সতেরও মা অসতেরও মা' এমনি করেই দেখা।
বাল্যবন্ধু স্বামী সারদাকে দোস্ত বলে সোম ডাকে
অধঃপতিত জনের সাথে সাধুর সঙ্গ কি থাকে?
'ওঠ গো করুণাময়ী খোলো গো কুটির দ্বার'
মাতাল বিনোদ সোমের অর্ত্তি সহে না প্রাণে আর।
বাতায়নে মা সারদার আবির্ভাব দেখে
পথের ধুলায় লুটিয়ে মা কে প্রণাম দিতে থাকে।
'তুমি দেখ আর আমি দেখি মা অন্যে নাই দেখে
তোমায় আমায় হয় দেখা মা দোস্ত যেন না দেখে।'
লুটিয়ে প্রণাম করার পরে মুখের পানে চায়
'এ্যঁ!মা তুমি!' বলে গিরিশের অঙ্গ কেঁপে যায়।
স্নেহ ভরে বলছেন, 'বাছা, এইটি খেয়ে নাও।'
ঘোর কলেরায় বাঁচাল যে মা, সেই মা তো এই হয়।
'তুমি আমার কেমন মা?' গিরিশ ঘোষে কয়।
'গুরু মা নই,পাতানো নই, সত্যিকারে যা হয়।'
পোষ্টমাষ্টার দেবেন চাটুজ্জে খ্রীষ্ট ধর্ম্ম নিয়ে
অনুশোচনায় দগ্ধ জেনে, মা নিলেন ফিরিয়ে।
ক্রিষ্টিনা ম্যাকলাউড স্বামীজী নিবেদিতা
বিশ্ব মাঝে ছড়িয়ে দিলেন তাঁর করুণা গাঁথা।
পুলিশ বলে, 'সারদাদেবী, স্বদেশীরা কি আসে?'
'কে স্বদেশী? কে বিদেশী? সন্তানেরা সব পাশে।'
'স্বয়ং ঠাকুর নিতেন বেছে' প্রেমানন্দ স্বামী কয়
'মায়ের কাছে ঝাড়াই বাছাই বিদ্যেও পায় লয়।'
'প্রভু চৈতন্য দাও মুক্তি দাও যারা প্রাণ দিয়েছে সঁপি
দেখ অহরহ তাদের হ'য়ে মন্ত্র আমি জপি।'
শান্তি চাইলে এ সংসারে দোষ কারুর না দেখ
এ জগতে পর নয় কেউ আপন করতে শেখ।
মা আমায় দয়া ক'রে শিশুর মত করে দেখো
শৈশবের আনন্দলোকে আপন করে রেখো।
পাপ নাও পুণ্য নাও অসংখ্য প্রণাম
শোক্ নাও অর্ত্তি নাও সারদা সম্মান
ভক্তি নাও মুক্তি নাও চরণে দাও স্থান।
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈
