ভারতাত্মার মূর্ত্ত প্রতীক বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ
জন্ম - 12.01.1863 মৃত্যু - 04.07.1902
জনক-বিশ্বনাথ দত্ত।
জননী-ভুবনেশ্বরী দেবী।
বীর সন্ন্যাসী, রাজ সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসী রাজ, চারণ সন্ন্যাসী, সৈনিক সন্ন্যাসী, কূটনৈতিক সন্ন্যাসী, সাইক্লোনিক মঙ্ক, প্রমাণ পুরুষ, স্বয়ং ভারত।
কতজনের দৃষ্টিতে কত রূপেই না প্রতিভাত হয়েছেন তিনি।কারণ তিনি মুক্ত পুরুষ ও মুক্তি প্রদায়ী পুরুষ।মুক্ত পুরুষের সংস্পর্শে এলে কল্যাণ ও শ্রেয় আশু প্রসূ হয়। তাই তাঁর জন্মদিন 12 ই জানুয়ারী তথা 'যুবদিবস'এ তাঁকে স্মরণ মনন করা হবে।তাঁর জীবনের কয়েকটি ঘটনা গল্পের আকারে উল্লেখ করে কৃপা প্রার্থনায় ব্রতী হচ্ছি।
মুখোমুখি
'আরে!ছুটছ কেন?ছুটছ কেন?পালিও না। পশুগুলোর মুখোমুখি হও।'
থামলেন স্বামীজী। স্বামীজীকে পিছন ফিরতে দেখে, পেছনে তাড়া করা বানর গলোও থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল, তারপর পালিয়ে গেল।
বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর এই মুখোমুখি হওয়ার ডাক, স্বামীজীকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল।
সত্যিই তো ভয়ের মুখোমুখি হয়ে মোকাবিলা করতে শুরু করলে, ভয়ই, ভয়ে পালায়।
লজ্জাহরণ-লজ্জাভরণ
আগষ্ট1888। পর্যটনে বেরিয়ে অযোধ্যা লক্ষ্মৌ আগ্রা হয়ে বৃন্দাবনে পৌঁছোলেন। স্নান করে প্রভুর দর্শনে যাবেন। এলেন রাধাকুণ্ডে।পরনের কৌপিন রোদে শুকোতে দিয়ে পূণ্যসলিলা কুণ্ডে মনোমত স্নান-আহ্নিক করে কী খুশিই না সন্ন্যাসী। এবার পাড়ে গিয়ে কৌপিন পরে একেবারে প্রভুর কাছে গিয়ে পড়বেন। কিন্তু একি!কৌপিন কোথায়? এদিক ওদিক তাকিয়ে কিচ্ কিচ্ শব্দে উপরে চোখ পড়তেই চক্ষু স্থির!বানর মহারাজ বৃক্ষে, কৌপিন তার বক্ষে। অনেক স্তবস্তুতি করলেন। পেলেন দাঁত খিঁচানো,না, কৌপিন নয়। অভিমানে চোখ জলে ভরে গেল। কৌপিন না পেলে ঈশ্বর দর্শনে যাবেন না বরং প্রায়োপবেশনে প্রাণ দিবেন। চললেন বনের দিকে।
ক্ষণকালের মধ্যে মনে হল, পিছন থেকে কেউ যেন ডাকছে, 'স্বামীজী দাঁড়ান, দাঁড়ান।'ভ্রূক্ষেপ না করে আরো দ্রুত বনপথে এগোতে থাকলেন। লোকটি দৌড়ে এসে স্বামীজীর সামনে দাঁড়াল।অনুনয় করল,তার আনা কৌপিন খণ্ড ও আহার্য গ্রহণ করতে।স্বামীজী খানিকক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো নির্বাক হয়ে রইলেন।তারপর বহু সম্মানে গ্রহণ করলেন ঈশ্বরীয় দান। কিন্তু কি আশ্চর্য!আগন্তুক কোথায়?কৌপিন পরবার পর আর কোথাও তাঁকে পাওয়া গেল না। এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে রাধা কুণ্ডের দিকে চোখ পড়তে আবার চক্ষু স্থির। একি!
তাঁর কৌপিন তো যথাস্থানেই মেলা আছে!
মহাজন
ডিসেম্বর,1889. ট্রেণে-গাজীপুর যাত্রা।কামরায় সহযাত্রী এক মাড়োয়ারী পরিবার। সন্ন্যাসী?তাও যুবা? নিশ্চিত ভেকধারী। তাহলে? অনর্গল ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ চলতেই থাকল,চলতেই থাকল।সারাপথ।
স্বামীজী নীরব নির্বিকার। তাড়িঘাট স্টেশনে স্বামীজী নামলেন। মাড়োয়ারীরাও। চৌকিদারকে উপঢৌকন(ঘুস) দিয়ে তারা বিশ্রাম কক্ষে স্থান পেলেন আর না দিয়ে প্লাটফর্মের রোদের মধ্যে সন্ন্যাসী শুকোতে লাগলেন। বিদ্রুপ আরো তীব্র হল। কিনে মিষ্টান্ন ও ঠাণ্ডা পানীয় ইত্যাদি গ্রহণ করতে করতে তাচ্ছিল্যভরে বললেন, 'আমরা উপার্জন করি, মণ্ডামিঠাই খাই, ভাল জায়গায় আশ্রয় পাই, তুমি উপার্জন কর না,পরের কৃপাপ্রার্থী হয়ে হীন জীবন যাপন কর, শুকিয়ে মর...।'
ঠিক্ এই সময়ে এক অবাক কাণ্ড! একটা লোক বগলে মাদুর, একহাতে জল ঘটি ও অন্য হাতে কিছু খাবার নিয়ে স্বামীজীর কাছে এসে হাজির।মাদুর পেতে তাতে বসতে ও খাদ্য গ্রহণ করতে অনুনয় করতে থাকল। স্বামীজী বললেন, 'তুমি ভুল করছো, আমি তো তোমার পরিচিত নই। এগুলো..'
লোকটি বলল, 'মহারাজ, দুপুরে খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। আরাধ্যদেব রামচন্দ্রজী স্বপ্নে উপস্থিত হয়ে বললেন, যা যা দৌড়ে, আমার পরম ভক্ত ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে স্টেশনের রোদে বসে আছে।' ভাবলাম এ তো স্বপ্ন, দিবাস্বপ্ন। এ কি আর সত্যি? কিন্তু পর পর তিনবার। প্রতিবারে আপনার মুখই দেখেছি। কোন ভুলহয়নি। না, ভুল অবশ্য একটা হয়েছে, দু'দুবার স্বপ্নকে মিথ্যা মনে করে।
আপনি সন্ন্যাসী, মহাজন।মহারাজ! অনুগ্রহ করে আমায় ক্ষমা করুন। এ দীনহীনকে কৃপা করুন।
এবার মাড়োয়ারী মহাজনের বিষ্মিত ও অনুতপ্ত হওয়ার পালা।
ইষ্টদর্শন
1891. স্বামীজী আলোয়ারে। মহারাজ মঙ্গল সিংহের দরবারে। আলোচনা চলেছে। একসময়-
মহারাজ-আমি মূর্ত্তি পূজায় বিশ্বাসী নই।
স্বা.-যে কোনো রকম বিশ্বাসের অধিকার আপনার
আছে।
মহা.-না,একখণ্ড ধাতু বা মৃত্তিকা তো আর ঈশ্বর
হতে পারেন না। পারেন কি?
স্বা -(সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে) মহারাজ!দেওয়ালের ঐ ছবিটি কি আপনার? প্রতিকৃতিটি
আমি কাছে পেতে চাই।(পাওয়ার পর) আসুন দেওয়ানজী,আসুন সভাসদগণ এই প্রতিকৃতির উপর একবার করে থুতু ছিটিয়ে যান।
দেওয়ান-এ আপনি কি বলছেন স্বামীজী!
স্বা.-কেন?কেন?এ ছবি তো আর সত্যি সত্যি মহারাজ নয়,একটুকরো কাগজ বই তো নয়। কানেও শোনে না, কথাও বলে না।...
সবাই-তবুও---
স্বা-তবুও। তবুও আমি জানি, এ কাজ আপনারা করতে পারবেন না, পারা উচিতও নয়।একদিক দিয়ে দেখলে, এই চিত্রে মহারাজ স্বয়ং নেই-যা পূর্বে বলেছি।অপরদিক দিয়ে দেখল