মেদিনীকথার আজকের দিনের উদযাপন জামাই আদর।

ফাইল চিত্র,

করোনার থাবা না উঠতেই চক্রধারী আমফানের ফণা এরপর আবার নতুন করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপালের উপদ্রব সহ ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা এমতাবস্থায় জামাইবাবাদের অবস্থাটা ভেবে দেখুন।আর আপনি যদি জামাই হন আবার এইটাই প্রথম জামাইষষ্টি ছিলো তবেতো হয়েই গেলো।ভগবান ও যেন প্রত্যক্ষ করছেন।

দ্বাদশ শ্ৰেণীর বাংলা বইয়ের মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পের একটি বিখ্যাত লাইন যেন আজ বাস্তবে সত্য হয়ে গেছে।

” …এমন দুর্যোগে ভগবান ও কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোন বোধ করি। “

ফাইল চিত্র,

জামাইষষ্টি মানেই জামাই বাবা জীবনের দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি ‘চব্য চোষ‍্য লেহ‍্য পেয়’-র যে মেলবন্ধন খানিকটা গরম মশলার মতোই। বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে এটি একটি যা উভয় বাঙলাতেই মহাসমারোহে পালিত হয়।

জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা কাটিয়ে শুক্ল পক্ষের প্রথম ষষ্টিই শুক্লাষষ্টি বা অরণ্যষষ্টি যা জামাইষষ্টি নামেই অধিক পরিচিত।

জামাইষষ্টি যে কেবলই বিবাহিত পুরুষদের জন্য তেমনটা নয়। আগেকার দিনে মায়েরা সন্তানদের মঙ্গল কামনার্থে এই ব্রত পালন করতো।

মনস্তত্বের বিচারে মেয়ের মনের মানুষ অর্থাৎ স্বামীইতো জামাই তাই।

ফাইল চিত্র,

“তুমি যদি জামাইষষ্টি যেতে পারো আমাদের কি বৌমাষষ্টি দাবি করতে নেই!”

আর এখনো পূর্ববঙ্গের অনেক বাড়িতে জামাইয়ের বদলে কেবলমাত্র মেয়েকেই ডাকা হয় । ‘জামি’ শব্দটি জামাই শব্দের খুব কাছাকাছি যার অর্থ বধূ বা বউ। এটা কি তবে “বৌমাষষ্টি” বা “জামিষষ্টি”!

এই ব্রতের ভাগিদার কারা তা নিয়ে মনে কোনো প্রশ্ন না রেখে জানবো ইতিহাস এই ব্রতের কি ব্যাখ্যা দিয়েছে।বাংলায় আঠারো-উনিশ শতকের গোড়ায় ঘটে চলা বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ ছিলো খুবই মারাত্মক। এমতাবস্থায় মেয়েকে অল্পবয়সে বিধবা হওয়ার থেকে বাঁচাতে শাশুড়ির জামাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো আর সেটাই রূপ পরিবর্তন করে জামাইষষ্ঠী উৎসবের সৃষ্টি।

ফাইল চিত্র,

আবার তখনকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাড়ির বউয়ের একা বাপের বাড়ি যাওয়া দোষের ছিলো তাই হয়তো ‘জামিষষ্ঠীর’ নাম বদল ঘটে ‘জামাইষষ্টি’ হয়।

সবই বুঝলাম তবে দেবী ষষ্ঠীর ফান্ডাটা এখনো পরিষ্কার নয়। পুরানের বর্ণনানুসারে ঘটনাটি শুরু হয়েছিলো অনেক আগে থেকে। দেবী ষষ্ঠীর বাহন বিড়ালকে কেন্দ্র করে। নির্দোষ বিড়ালটিকে প্রত্যেকদিন মার খেতে হতো ব্রাহ্মণবাড়ির ছোটোবৌয়ের লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির রান্না খাবার জন্য। দেবী সব অবগত হয়ে বাহন বিড়ালের উপর ঘটা অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে ছোটো বৌয় যতবারই সন্তান প্রসব করলো দেবী করলেন হরণ। সবাই রাক্ষসী বলে ক্ষেপানো শুরু করায় ছোটবৌ দ্বারস্থ হলো দেবী ষষ্ঠীর। মা সন্তুষ্ট হয়ে ওর সব ছেলেপুলেকে ফিরিয়ে দিলো তাই পরবর্তীতে সন্তানহারা পিতামাতা সন্তান পাবার আশায় ও সন্তানের মঙ্গলাথে দেবী ষষ্ঠীর আরাধনা করে।

ফাইল চিত্র,

দূর্বা ধান ,সুপারি পান দিয়ে কোনোরকমে জামাই বরণ সারলেই সকাল থেকে উপোষী শাশুড়ি ছুটবেন হেঁসেলে এক মহাভোজের প্রস্তুতিতে। জলখাবারে দিয়ে যাবেন গরম ফুলকো লুচি, আলুরদম,নানা স্বাদের বর্নের মিষ্টান্ন আর জ্যৈষ্ঠের আম, জাম,লিচু, কাঁঠাল। হজম হতে না হতেই মধ্যাহ্নভোজ বাসমতি চালের ভাত, মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা সোনা মুগের ডাল সঙ্গে নানান ভাজা স্পেশালি ঝুরো করে ভাজা আলু থাকবে আরো নানান পদ, কচি পাঠার মাংস অথবা মুরগি, সরষে ইলিশ ,কাতলার কালিয়া অথবা চিংড়ি ইলিশ।শেষে আসবে চাটনি, সন্দেশ, রসগোল্লা, দই,পায়েস,পাঁপড়।

যদিও বলা বাহুল্য এত প্রাচীন এই পার্বণ অনেক গৃহস্থ বাড়িতেই পালিত হয় না।

✍️ অনিমেষ দাস।

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *