মেদিনীকথার উৎসর্গ বীর বিপ্লবী শহীদ বিনয় বসু।

ফাইল চিত্র,

বিনয় বসু

যে তিন অকুতোভয়ী বাঙালি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়ে দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তারা হলেন বিনয় বসু , বাদল গুপ্ত , দীনেশ গুপ্ত ।
তারা বিশ্বাস করতেন সাইমন বলিভারের সেই উক্তিটিকে -

“স্বাধীনতা ছাড়া কারো পিতৃভূমি থাকতে পারে না”

বিনয় বসু ছিলেন বাংলার অলিন্দ যুদ্ধের বীরত্রৈয়ীর সেনানায়ক । বাংলার অলিন্দ যুদ্ধের বীরত্রৈয়ীর অন্যতম সেনাপতি বিনয় কৃষ্ণ বসু, যিনি বিনয় বসু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বা মুক্তি যুদ্ধের বীর বিপ্লবী ছিলেন ।  অগ্নিযুগের অন্যতম শহীদ ছিলেন বিনয় বসু ।বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর ঢাকা শাখার সদস্য ছিলেন । ঢাকার কুখ্যাত পুলিশ অফিসার লোম্যান ও অত্যাচারী জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসন কে হত্যা করে ভারতীয়দের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন । 

জন্ম:
১১ ই সেপ্টেম্বর ১৮৯২,মুন্সীগঞ্জের,রোহিতভোগ গ্রাম, ঢাকা ।

আত্মবলিদান :
১৩ ডিসেম্বর, ১৯৩০, কোলকাতা।

১৯০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের রোহিতভোগ গ্রামে জন্ম নেন । তার পিতার নাম রেবতী মোহন বসু তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন । বিনয় ভীষণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন । ছোটো থেকেই বিনয় ছিলেন অত্যন্ত জেদী এবং ডাকাবুকো স্বভাবের । তার ভীষণ সাহস ছিল কোনোকিছুতেই ভয় ডর ছিলো না । মাঝরাতে একা একা বেরিয়ে যেতেন বিপ্লবী নেতা হেমচন্দ্র ঘোষের গোপন আস্তানায় গিয়ে অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে মিলিত হতেন ।
স্কুলের পড়া শেষ হল । পড়াশুনার দিকে বিনয় ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী । অল্পক্ষণ পড়ার সুযোগ পেতেন । কিন্তু যা পড়তেন , মন দিয়ে পড়তেন । প্রতিটি পরীক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন । ছোটোবেলায় স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে ডাক্তার হবেন । সাধারণ মানুষের সেবা করবেন । এবার সেই স্বপ্ন সফল হল । ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ।
ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু আদর্শের ডাকে সব কিছু উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সশস্ত্র বিপ্লবে , স্বদেশী আন্দোলনে । মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই  হেমচন্দ্র ঘোষের কাছে বিপ্লবের দীক্ষা নেন । হেমবাবু এক বিশিষ্ট নেতা । অসাধারণ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ । যে কোনো তরুণকে দেখলেই বুঝতে পারতেন যে , তার চরিত্রের মধ্যে কী ধরনের নীতি কাজ করছে । তখন বাংলার নানা জায়গাতে একাধিক গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠেছে । হেমচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল মুক্তি সংঘ । এই সংঘের মুখপত্র হিসেবে ‘ বেণু ’ পত্রিকা প্রকাশিত হত । হেমচন্দ্রের প্রত্যক্ষ প্রভাবে সেদিনের কিশোর বিনয় মুক্তি সংঘের সঙ্গে যুক্ত হলেন । ' বেণু ’ গ্রুপের সঙ্গেও তার সংযোগ স্থাপিত হল ।

স্বাধীনতার দাবী ক্রমে ক্রমে দানা বাঁধতে থাকে ভারতে । ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা হল জাতীয় কংগ্রেসের আর ১৯১৫ সালে মহাত্মা গান্ধী দক্ষিন আফ্রিকা থেকে ফিরে কংগ্রেসে যোগ দিলেন । তাঁর অহিংস নীতির সাথে দ্বিমত পোষন করতেন নেতাজী সুভাষ বোস । নেতাজী বিশ্বাস করতেন শুধুমাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব । তারই প্রস্তুতি হিসেবে ১৯২৮ সালে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের সম্মেলনে থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু গোড়াপত্তন করলেন “বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স” এর । এই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর সদস্যরাই প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ।  সশস্ত্র আন্দোলনে গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিল সেদিন বাংলার তরুণ তরুণিরা । 
১৯২৮ সালে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল গঠন করেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু । কুড়ি বছরের বিনয় বসু বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর ঢাকা শাখায় যোগ দেন ও নেতৃত্ব দেন । 
শুরু হল পড়াশুনার অধ্যায় । কিন্তু এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় । ঢাকার কুখ্যাত পুলিশ অফিসার লোম্যান একটির পর একটি অন্যায় করে চলেছেন । বিনা বিচারে অসংখ্য মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে । এমনকি বাড়ির মহিলাদের শ্লীলতাহানি করছেন । বিপ্লবী দল এক গোপন অধিবেশনের মাধ্যমে ঠিক করল , যে করেই হোক লোম্যানকে পৃথিবী থেকে সরাতে হবে । বিপ্লবীরা সংকল্প নেন বিপ্লবীদের উপর পুলিসের অকথ্য অত্যাচারের বদলা যেভাবেই হোক নেওয়া হবে ।
কিন্তু কার ওপর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া যায় । অনেক ভেবে - চিন্তে বিনয় বসুকে নির্বাচন করা হল ।
১৯৩০ সালের ২৯ শে আগস্ট পুলিস ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান গেছেন এক বৃটিশ অফিসারকে দেখতে মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । প্রকাশ্য দিবালোকে  বিনয় গুলি করে হত্যা করলেন লোম্যানকে । লোম্যানে ও তার সঙ্গী পুলিস সুপারিনটেন্ডেন্ট হডসন গুরুতরভাবে আহত হলেন বিনয় বসুর গুলিতে । কলকাতা থেকে বিমান যোগে চিকিৎসকদল এসেও দেহের গ্রোয়েন অঞ্চলে গুলিবিদ্ধ লোম্যানকে বাঁচাতে পারেনি । মনে করা হয় বুলেট শিরদাঁড়াকেও আঘাত করেছিল । পুলিস ঘিরে ফেলল এলাকা । কে খুন করল ? কোথায় খুনি ? একে একে সবাইকে জেরা করল পুলিস । যে ঝাড়ুদার হাসপাতালের মেঝে ঝাড়ু দিচ্ছিল তাকেও জেরা করা হল । কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে ঝাড়ুদার বনে যাওয়া বিনয়কে চিনতে পারল না পুলিস । বিনয় বসু সুকৌশলে মুহূর্তের হাসপাতাল ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। লোম্যান হত্যাকারী বিপ্লবী বিনয় বসুকে উদ্দেশ্য করে সেদিন বাংলার অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন -

“ধন্যি ছেলে, দেখিয়ে গেছে আমরাও জবাব দিতে জানি”।

এই ঘটনার পর ঢাকায় সর্বত্র পুলিশের অমানুষিক অত্যাচার শুরু হয় । প্রকাশ্য দিবালোকে বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এফ জে লোম্যানকে হত্যা করার পর এক আততায়ীর নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঢাকা পুলিশের অকর্মণ্যতার পরিচায়ক । সুতারং অকর্মণ্যতার গ্লানি দূর করার জন্য আসামীর সন্ধান করতে পুলিশ হন্যে হয়ে ওঠে । যুবকদের ধরে থানায় আটক রেখে নির্যাতন চালায় । পুলিশের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠে ঢাকাবাসী । পুলিশের ভয়ে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যায় ।

লোম্যানের হত্যাকারী আততায়ীকে পুলিশ ধরতে সক্ষম না হলেও আততায়ী যুবক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছিল । কলেজ ম্যাগাজিন থেকে তার ছবি নিয়ে সমস্ত রেল স্টেশানে, ফেরীঘাটে টানিয়ে রাখা হল যাতে পালাতে না পারে বিনয় । 
বিনয়ের সন্ধানদাতার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষনা করল পুলিস । 

স্টেশনে পুলিসের সতর্ক পাহারা, প্রতিটি কামরা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করছে পুলিস । দিনমজুর দুজন পুলিসের চোখকে ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়লো একটা ৩য় শ্রেনীর কামরায়। বিনয় ভাল ভাবেই জানতেন নারায়নগঞ্জ স্টেশানে পুলিসের পাহারা থাকবে্, সিগন্যালের কাছে ট্রেন গতি কমাতেই সঙ্গীকে নিয়ে নেমে পড়লেন । এবার স্টিমারে করে নারায়নঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ, সেখান থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা। 

এর পর বিনয় বসু ও দলীয় সদস্য সুপতি রায় মুসলিম শ্রমিক বেশে দোলাইগঞ্জ (গেণ্ডারিয়া) রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে চাষাড়া যান । চাষাড়া স্টেশনে ট্রেন থামা মাত্র তাঁরা দেখতে পেলেন, পুলিশ প্রতিটি কামরায় উঠে আততায়ীকে ধরার জন্য চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে । বিনয় বসু ও সুপতি রায় খুব সতর্কভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যান । তাঁরা দুজন স্থানীয় বিপ্লবী গিরিজা সেনের বাড়িতে আত্মগোপন করেন । পরদিন ভোরে তাঁরা খেয়া পার হয়ে বন্দরে যান নারায়ণগঞ্জ শহরের বিপরীত পাড় সেখান থেকে বৈদ্যনাথবাজার যান  তারপর মেঘনা পাড়ি দেওয়ার পালা ।
মেঘনা পাড়ি দেওয়ার জন্য মুসলমান শ্রমিকের বেশ পরিত্যাগ করে সুপতি রায় জমিদার এবং বিনয় বসু জমিদার ভৃত্যের ছদ্মবেশ ধারণ করেন । বিনয় বসু জমিদারের (সুপতি রায়) সফরের জন্য একখানা নৌকা জোগাড় করে মেঘনা পাড়ি দিলেন । নৌকা থেকে এসে একসময় স্টীমারে উঠতেও সক্ষম হন । স্টীমারে উঠে আবার মুসলমান শ্রমিকের বেশ ধরেন । তারপর স্টীমারে চড়ে ভৈরব স্টেশন, সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন । কিশোরগঞ্জ স্টেশনে ট্রেন থামলে পুলিশ আততায়ী ধরার জন্য ট্রেনে উঠে গাড়ির কামরাগুলো একে একে তল্লাশি চালানো শুরু করলে তাঁরা কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন ।  হঠাৎ জানালার পাশে টিটিকে দেখে দুজনে তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নেমে টিটির কাছে টিকিট না করে ট্রেনের চাপার জন্যে ক্ষমা চান । দুজনই টিটির সাথে টিকেট ঘরের দিকে টিকিট কাটতে চলে যান । ইতিমধ্যে ট্রেনের সকল কামরা তল্লাশি করা শেষ হয়ে যায় ।  ভীত যাত্রীর অভিনয়ে কোন রকমে পার পান সে যাত্রা । দুজনে গিয়ে ট্রেনে ওঠেন । ট্র্রেন চলে ময়মনসিংহ স্টেশনের পথে ।
ময়মনসিংহ স্টেশনে আবার এক বিপদ । ট্র্রেন থামার সাথে সাথে এক দারোগা তাঁদের বগিতে উঠে তল্লাশি শুরু করে । বিনয় বসু ও সুপতি রায় ততক্ষণাৎ পুলিশকে ফাঁকি দেয়ার পরামর্শ সেরে নেন ।  বিনয় বসু ছেঁড়া কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলেন আর সুপতি রায় দু-হাত জোড় করে দারোগাকে তার ভাতিজা অসুস্থ বলে জানান, ‘মনে হয় বসন্ত হইছে’ বলায় বসন্তরোগভীত দারোগা পরবর্তী স্টেশনে কাপড় মুড়ি দেয়া বিনয়ের মুখ না দেখেই সদলবলে নেমে যায় ।
সেখান থেকে তাঁরা নিরাপদে জগন্নাথগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ হয়ে থেকে সোজা কোলকাতা দমদম স্টেশনে নেমে  কোলকাতার ৭ নং ওয়ালীউল্লাহ লেনে অবস্থিত বিপ্লবী সুরেশ মজুমদারের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন । সুরেশ বাবুর বাড়ি ছিল বিপ্লবীদের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়স্থল ।
বেশীদিন একজায়গায় থাকা নিরাপদ নয় । পুলিস তার পিছে লেগে আছে ভাল মতই আঁচ করতে পেরেছিলেন । ডেরা বদল করে বিনয় বসু কাতারামগড় কোলিয়ারীতে অনাথ দাশগুপ্তের বাড়ি চলে গেলেন । এই বাড়ি ছিলো বিপ্লবীদের আর একটি গোপন আস্তানা । সেখান থেকে তিনি কিছুদিন পর ফিরে এলেন কলকাতায় । নেতারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন বিনয়ের নিরাপত্তার জন্যে। বিপ্লবীরা নেতৃবৃন্দের কাছে এব্যাপারে পরামর্শ চাইলে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, লেডী অবলা বসু, শরৎ বসু, সুভাষ বসু, শরৎ চাটার্জিসহ প্রায় সকল নেতাই আত্মরক্ষার জন্য বিনয় বসুকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার উপদেশ দেন । আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বিদেশ যাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করার প্রস্তাবও দেন । সেই মত তাঁকে বিদেশ পাঠানোর জন্য কিংস-বর্জ ডকের জনৈক পদস্থ কর্মচারীকেও ঠিক করা হল । পরদিন তাঁকে সমুদ্রগামী একখানা জাহাজে তুলে দেওয়া হবে । যাতে করে তিনি সোজা ইতালিতে যেতে পারেন । কিন্তু সকল পরামর্শ ও প্রস্তুতির অবসান ঘটালেন বিনয় নিজেই, কিছুতেই মাতৃভূমি ছেড়ে যাবেন না তিনি, জানিয়ে দিলেন নেতাদের । পরবর্তী অভিযানে অংশ গ্রহণের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করলেন ।

ওই সময় ভারতীয়দের উপর ইংরেজদের অত্যাচার-নির্যাতন শতগুণে বেড়ে যায় । শত শত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বিপ্লবীদের গ্রেফতার করে জেলে আটক রেখে চলে নির্যাতন । এই সময় ব্রিটিশ পুলিশ সুভাষচন্দ্র বসু, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত এবং সত্য বক্সীর মতো নেতৃত্বকেও গ্রেফতার করে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আটকে রাখে । একের পর এক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করায় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নতুন বন্দীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছিল না । জেলের মধ্যে সৃষ্টি হলো এক অসহনীয় অবস্থা । রাজবন্দীদের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছিল । তাঁরা জেলকোড অনুযায়ী কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন শুরু করে । এই আন্দোলন দমানোর জন্য ব্রিটিশ পুলিশ বেদমভাবে লাঠি চালায় । চলে নির্মম-নিষ্ঠুর অত্যাচার । সুভাষ বসু, যতীন্দ্রমোহন এবং সত্য বক্সীরাও বাদ গেলেন না এই অত্যাচার থেকে । এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ল জেলের ভিতরে । জানা গেল এই অত্যাচারের পিছনে রয়েছে ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসন । বিপ্লবীদের টার্গেট হলো কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল লে. কর্নেল সিম্পসন । যিনি বসতেন ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ - এ । বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল সিম্পসন । তাই সিম্পসনের নাম হত্যা তালিকার শীর্ষে ছিল ।

তাই বিপ্লবীদের পরবর্তী অভিযান ছিল কোলকাতার ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ আক্রমণ । অসংখ্য পুলিশ প্রহরী পরিবেষ্টিত দুর্ভেদ্য অফিস ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ । তাকে হত্যার দায়িত্ব পড়ে বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশচন্দ্র গুপ্ত-এর ওপর । এর পর  ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এন এস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল তিন  বিপ্লবী সাথে সাথে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত থাকবেন না বা থেমে থাকবেন না সাথে সাথে তারা কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স ভবনে বর্তমান মহাকরণ ভবন আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন ।
১৯৩০ সালের ৮ ই ডিসেম্বর দীনেশ তার দুই সঙ্গী বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্তসহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন । ব্রিটিশ পুলিশও তদের ওপর গুলি চালানো  শুরু করেন । ফলে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয় । টোয়াইনাম , প্রেন্টিস ও নেলসন সহ আরো বেশ কিছু অফিসার তাদের গুলিতে আহত হয় । পুলিশ দ্রুতই তাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করে ফেলে । কিন্তু এই তিনজন কোনোভাবেই ইংরেজদের হাতে ধরা দেবেন না প্রতিজ্ঞা করলেন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আত্মহত্যা করবেন । বাদল গুপ্ত সাথে সাথেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করেছিলেন । বিনয়কে আর দীনেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে বিনয়ের চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে সবে যখন মাথার ক্ষত শুকাতে শুরু করেছে ডাক্তারির ছাত্রটি ব্যান্ডেজ খুলে নিজেই ওর মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন । জীবিত অবস্থায় কিছুতেই ধরা দেবেন না পণ করেছিলেন যে !
কাজ হলো তার  ১৩ ই ডিসেম্বর সবার অজান্তে মহান এই বিপ্লবী পাড়ি দিলেন মহাপ্রস্থানের পথে মৃত্যুবরণ করলেন ।
শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ালো গোটা বাংলা । লাখো মানুষের কন্ঠে জেগে উঠলো সেই অমর বাণী.......
“নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই !” 
দীনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন কিন্তু তাকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং বিচারের রায়ে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসির সাজা ঘোষণা করা হয়েছিলো ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই তরুণ বীর বিপ্লবী ত্রয়ীর আত্মোৎসর্গ এবং স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কলকাতার ডালহৌসী স্কোয়ারকে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ’ (বি-বা-দী বাগ) নামে অভিহিত করা হয় । 
✍️ সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,পূর্ব মেদিনীপুর

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *