মেদিনীকথার উৎসর্গ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাস।

ফাইল চিত্র,

বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাস

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী ছিলেন যতীন্দ্রনাথ দাস ।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার মত কঠোর  পরিশ্রমি বিপ্লবী খুব কম দেখা গেছে । যতীন্দ্র নাথ দাস ছিলেন আরেক বীর বিপ্লবী বিপ্লবী ভগৎ সিংহ ও বাটুকেশ্বর দত্তের সহকর্মী । ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন করতে যেসকল বীর বিপ্লবী  অনশন করেছিলেন এবং অনশন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন বা আত্মবলিদান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন যতীন্দ্রনাথ দাস । আত্মত্যাগী, সাহসী মানুষটিকে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত  করে ১৯২৯ সালের ১৪ ই জুন গ্রেপ্তার করেন । জেলবন্দীদের স্বচ্ছল জীবন যাপনের অধিকারের দাবিতে ১৯২৯ সালের ১৩ ই জুলাই অনশন শুরু করেন তিনি টানা ৬২ দিন অনশন করবার পর ৬৩ দিনের মাথায় মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯২৯ সালের ১৩ ই সেপ্টেম্বর লাহোরের বোস্টল জেলের মধ্যেই তাঁর প্রয়াণ হয়  ।

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অনশন করে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কয়েকজন হচ্ছেন মহাবীর সিং, মোহিতমোহন মৈত্র, মোহনকিশোর নমোদাস, মহেন্দ্রলাল বিশ্বাস, হরেন্দ্র মুন্সী, অনিলকুমার দাস, মণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিতরাম রক্ষা, যতীন্দ্রনাথ দাস সহ আরো অনেকে ।

জন্ম:
২৭ শে অক্টবর,১৯০৪ সাল, কলকাতা ।

আত্মবলিদান :
১৩ ই সেপ্টেম্বর,১৯২৯ সাল, লাহোর ।

পিতা:-  বঙ্কিম বিহারি দাস
মাতা:-   সুহাসিনী দাস

১৯০৪ সালের ২৭ অক্টোবর যতীন্দ্রনাথ দাসের জন্ম। তাঁর পিতার নাম বঙ্কিমবিহারী দাস এবং মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন ৷ 
ছোটোবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন যতীন্দ্রনাথ দাস । খুব অল্প বয়স থেকে বিশ্বের বিভিন্ন বিপ্লবী দের জীবন কাহিনী পড়ে ফেলেন । তখন থেকে তাঁর মনে দেশ ভক্তির ভাব মনে জাগরিত হয় এবং দেশের স্বাধীনতার  স্বপ্ন দেখতে থাকেন ।

১৯২১ সালে বঙ্গদেশে সেই সময় ভয়ংকর বন্যা হয়েছিলো । সঙ্গে সঙ্গে যতীন দাস বন্যাত্রাণ কমিটি গঠন করেন ফেললেন । গ্রাম গ্রামান্তরে রাত কাটাতে থাকেন তিনি । সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন । বন্যার জাল নেমে যাওয়ার পর দেখা দেয় মহামারী, আর ভয় ডরহিন যতীন্দ্র নাথ দাস এই মহামারীর বিরুদ্ধে নিজের প্রচেষ্টায় লড়াই চালিয়ে ছিলেন । পরিবারের অনেকেই তাকে ফিরে আসতে বলেছিলেন । তবুও যতীন্দ্রনাথ তাতে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে আরো উদ্যোমের সাথে কাজ করতে থাকেন ।

তখন দেশে জুড়ে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে অসহযোগ আন্দোলন । গান্ধীজির ডাকে ছাত্র-যুব, থেকে শুরু করে দেশের আবাল -বৃদ্ধ -বনিতা দিকে দিকে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন । সেই সময় স্কুল,কলেজ, অফিস,আদালত  সহ বিভিন্ন দপ্তরে কর্মচারিরা ধর্মঘট করতে থাকেন,কাজ বয়কট করেন এমনকি দলে দলে পদত্যাগ করেন সেদিনের তরুণ যতীন্দ্রনাথ তুমুল উদ্দীপনা নিয়ে নেতৃত্বে নেমে পড়েন । এই সময় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ এবং গান্ধীজির ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন । আবার কংগ্রেস কমিটির সঙ্গেও তাঁর যোগ থাকায় সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতাও হয়েছিল ।
১৯২৩ সালে যতীন্দ্রনাথ বিপ্লবী দলে সক্রিয় সদস্য পদ গ্রহণ করেন । এই সময় বিশিষ্ট বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কলকাতাতে এসেছিলেন । শচীনবাবুর অনুরােধে ভবানীপুরে একটি গােপন বিপ্লব কেন্দ্র স্থাপিত হয় যতীনদাস ছিলেন সেই বিপ্লবী দলের অন্যতম সংগঠক । তার ওপর একটি কঠিন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল । তাকে বিভিন্ন পরিবারের ছেলেদের সঙ্গে মিশতে হবে । তিনি দেখতেন কার মধ্যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ রয়েছে । আর যার মধ্যে আগুনের দীপ্তি থাকবে সেই ছেলেটিকে দলের সদস্য করতে হবে  এর জন্য যতীন দাসকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছিলো । এই কাজে যতীন্দ্র নাথ অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছিলেন । পরবর্তীকালে দক্ষিণেশ্বরে বিপ্লবী দলের সঙ্গে যতীন্দ্রনাথ দাসের গােপন যােগাযােগ স্থাপিত হয়েছিল । ১৯২৪ সালে যতীন্দ্রনাথ দক্ষিণ কলকাতায় “তরুণ সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন ।
এই সময় পুলিশের কুনজরে পড়েন যতীন্দ্র নাথ । পুলিশ বুঝতে পারল , কুড়ি বছরের এই তরুণ যুবকে অবিলম্বে কারারুদ্ধ করতে হবে আর তা না হলে যতীন্দ্র নাথ দাসের একক প্রয়াসে আন্দোলন আরও কেন্দ্রীভূত ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে । তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযােগ করা হল । যতীন্দ্র নাথ দাসকে গ্রেপ্তার করে পাঠানাে হল ঢাকা জেলে । ঢাকা জেল কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যতীন্দ্রনাথ অনশন শুরু করলেন । একেদিকে কিশাের , তার ওপর অনশন করছেন । দেশবাসী তার জন্য ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল । টানা ২৩ দিন ধরে তিনি অনশন করেছিলেন । বন্দি জীবন থেকে মুক্তিলাভ করল। মুক্তি পেয়ে তিনি আবার স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগ দিলেন ।

যতীন্দ্রনাথ বোমা তৈরি করতে পারতেন এবং বিপ্লবীদের বোমা বানানো শেখাতেনও । ভগত সিংয়ের অনুরোধে তিনি আগ্রা যান বোমা তৈরি করতে ও শেখাতে । সেই সময় বিভিন্ন অঞ্চলের লোক আগ্রায় আসেন তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে । ঝাঁসির জঙ্গলে বোমা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয় । ভগত সিং. বটুকেশ্বর দত্ত ও বিজয় কুমার সিংহ নির্জনে একটি বাড়ি ভাড়া নেন । সেখানেই এলেন যতীন্দ্রনাথ দাস । যতীন দাসকে ঘিরে চারিদিকে কড়া পাহারা । তাঁর কাছেই ট্রেনিং নিয়ে শুকদেব গেলেন লাহোরে, আর শিব বর্মা গেলেন সাহারানপুরে, যেখানে আরও দুটি গোপন বোমা কারখানা খোলা হয়েছিল ।
অল্প বয়সে তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে প্রবীণ বিপ্লবীরা অবাক হয়ে ওঠেন এবং তাদের অনেকেই বলেছিলেন ভবিষ্যতে নিশ্চিত মহান বিপ্লবী হবে । তাঁদের কথা মিথ্যা হয়নি । সত্যি মহান বিপ্লবী হয়েছেন দেশের জন্যে শহীদ হয়ে ছেন । দেশের জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন ।

১৯২৯ সালের ১৪ জুন  রোজকার মতো কলকাতার দিন শুরু হয়েছে । আপাতভাবে শান্ত দেখালেও, পরিস্থিতি কি তেমন ছিল ? ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ফুটছে গোটা দেশ, ফুটছে বাংলা । দলে দলে যুবকেরা তুলে নিচ্ছে পিস্তল । সরকারের ভেতরে ক্রমশ ভয় বাড়ছে । সেইসঙ্গে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়, অভিযান ।

১৯২৮ সালের ৩০ শে অক্টোবর লাহােরে লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল । পুলিশ নিরীহ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্মমভাবে লাঠি চালায় । সেই লাঠির আঘাতে প্রবীন নেতা লাজপত রায় গুরুতর ভাবে আহত হন । সতেরো দিন বাদে তার মৃত্যু হয় । লাঠিচার্জের আদেশ দিয়েছিলেন লাহোর পুলিশ সুপারিটেনডেন্ট মিস্টার স্কট । এই ঘটনায় বিপ্লবীরা অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিলেন । লালা লাজপত ছিলেন বিপ্লবীদের অন্যতম নেতা । সাংগঠনিক ক্ষমতায় সকলের উদ্ধে অবস্থান ছিল তার ।
তাকে এইভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে ,তাই হিন্দুস্তান সােস্যালিস্ট রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা এস পি স্কটকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলেন । ১৯২৮ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর স্কটের ওপর আক্রমণ চালানাে হল । এই অভিযানে যােগ দিয়েছিলেন ভগত সিং , রাজগুরু সহ আরও বেশ কয়েকজন বিপ্লবী । তাঁরা এস পি স্কটের পরিবর্তে স্যাণ্ডার্সকে হত্যা করলেন । ব্রিটিশ সরকার লাহাের ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করল ।

আগের বছরেই লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে ঘাতক পুলিশ স্যান্ডার্স-কে হত্যা করে । আর জুনের প্রথম দিকেই দিল্লির অ্যাসেম্বলি হলে বোমা ফাটান বিপ্লবী ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত । এমন পরিস্থিতিতেই হাজরা রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালাল ব্রিটিশ পুলিশ । গোপন খবর, এখানে লুকিয়ে আছে এক বিপ্লবী । দোতলায় উঠে পেয়েও যায় তাঁকে । ২৪ বছরের এক তরুণ নাম যতীন্দ্রনাথ দাস । যতীন দাসকে তার কলকাতার বাড়ি থেকে লাহোর পুলিশের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয় । এহেন মানুষটি যে সহজে হার মানবে না, তা বিলক্ষণ জানতেন ব্রিটিশ সরকার । কিন্তু আফসোস, যতীন দাস সম্পর্কে যতটুকু জেনেছেন বা দেখেছেন তাঁরা, তিনি এসবের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলেন । সেইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু-সহ আরও ১৭ জন বিপ্লবীকে । প্রথমত পুলিশ অফিসার স্যান্ডার্স হত্যা, দ্বিতীয়ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র— এই দুই অপরাধ সামনে এনে শুরু হল ইতিহাস বিখ্যাত লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা । সমস্ত বন্দি বিপ্লবীদের নিয়ে যাওয়া হল লাহোর সেন্ট্রাল জেলে । সেই দলে ছিলেন যতীন দাসও । লাহোরে এসেও বন্দিদের দুর্দশা দেখতে হয় তাঁকে । তখনও কি ব্রিটিশরা জানতেন, তাঁদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে । 
মূলত ঐ সময় ইস্যু ছিল লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারাধীন বলে এই গ্রেপ্তার । পরবর্তী সময়ে এরা জেলের ভেতর রাজনৈতিক বন্দিদের মর্যাদার দাবীতে এবং মানবিক সুযোগ সুবিধার দাবি নিয়ে আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল । আবার অনশন করবার সিধান্ত গ্রহণ করলেন ।
জেলখানার অভিজ্ঞতা যতীনের অবশ্য নতুন নয় । তখন ১৯২১ সাল । সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একদল যুবক কলকাতার একটি কাপড়ের দোকানের সামনে পিকেটিং আরম্ভ করলে অনেকের সঙ্গে তিনিও গ্রেফতার হন । বেশিদিন অবশ্য আটকে রাখা যায়নি তাঁকে । জেল থেকে বেরিয়ে আবার শুরু করেন আন্দোলন । ধীরে ধীরে মহাত্মা গান্ধীর নীতি থেকে সরে আসছিলেন বিপ্লবী ভাবধারায় । যোগাযোগ বাড়ছিল বাকিদের সঙ্গে । এমন সময় আবার কারাবরণ । তখন যতীন দাস বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র । এবার কলকাতায় নয়, পাঠিয়ে দেওয়া হল সোজা ময়মনসিংহে । সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশেরা বন্দিদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করতে শুরু করে । এটা কেন হবে? তাঁরা তো রাজনৈতিক বন্দি, সেরকম মর্যাদা কেন দেওয়া হবে না? যতীন দাস শুরু করলেন অনশন । একসময় জেল সুপার নিজে এসে ক্ষমা চাইলেন যতীন দাসের কাছে । তখন তিনি অনশন ভঙ্গ করেছিলেন এবং ছাড়াও পেলেন কিছু দিন পর ।

তারা ১৩ জুলাই থেকে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের সমর্থনে অনশন সংগ্রাম আরম্ভ করেন । যতীন দাস ছাড়া আর কারো অনশন আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ছিল না তিনি আর অন্যান্য বিপ্লবীদের বলেছিলেন ভাবাবেগে চালিত হয়ে অনশন সংগ্রামে যোগ না দিতে, তিনি বারে বারে নিষেধ করেছিল অন্য সাথীদের । যতীন তাঁদের বলেছিলেন রিভলবার পিস্তল নিয়ে লড়াই করাই চেয়ে অনেক বেশি কঠোর এক অনশন সংগ্রামে আমরা নামছি । অনশন সংগ্রামীকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হয় ।

যতীন দাস আরো বলেন, সে নিজে অনশন আরম্ভ করলে যতদিন না সরকার দাবী মেনে না নেয়, ততদিন অনশন চালিয়ে যাবে । সবাইকে বলে তাড়াহুড়ো করে কোন কিছু না করাই ভাল । যতীন দাসের হুশিয়ারি সত্ত্বেও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐতিহাসিক লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার অনশন শুরু হয় আর অনশন চালাতে থাকে । ২ রা সেপ্টেম্বর যতীন্দ্রনাথ ছাড়া জেলের অনশন রত অন্য কয়েদিরা অনশণ প্রত্যাহার করেন । বিপ্লবীদের পরম বন্ধু গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী , সুভাষচন্দ্র বসু , লাহাের জেলে বিপ্লবীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলেন । শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দিলেন । তারা যতীন দাসের সঙ্গে দেখা করলেন । তাকে অনশন ভঙ্গ করার জন্য আন্তরিক অনুরােধ জানালেন । যতীন দাস কিন্তু এই অনুরােধ রাখতে পারেননি । বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে একসময়ের সঙ্গী এই তরুণটির প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেলেন সুভাষচন্দ্র বসু । 

তারপর থেকে যতীন্দ্রনাথের শারীরিক অবস্থা ক্রমস খারাপ হতে থাকে ডাক্তার জানান বাঁচার কোনো আশা নেই । একসময় গলা দিয়ে আওয়াজ বের করারও শক্তি ছিল না । কিন্তু ভেতরে যে  ‘ দধীচির আত্মা ’ বলে সম্বোধন করলেন সুভাষ চন্দ্র বোস । অনশনের খবর গোটা দেশে ছড়িয়ে গেল । পৌঁছে গেল বাংলাতেও । যতীন দাসের সেই তেজ ছড়িয়ে গেল প্রতিটা গ্রামে, শহরে । এই সময় পুলিশ কর্তৃপক্ষ যতীন দাসকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল । নাকে নল ঢুকিয়ে জোর জবরদস্তি করে খাওয়াবার সময় নলটি ফুসফুসে ঢুকে যায় এর ফলে যতীন্দ্রনাথ দাসের নিউমােনিয়ায় আক্রান্ত হন । অনশনব্ৰতী হিসেবে শেষ পর্যন্ত তিনি ওষুধ খেতেও অস্বীকার করেছিলেন । যতীন দাসের শারীরিক অবস্থা দিন দিন শােচনীয় হয়ে পড়ে । ডাক্তাররা শেষ পর্যন্ত জানালেন যে , যতীন দাসের বাঁচার কোনাে আশা নেই । রক্তের প্রবাহ হৃদয়ের আশেপাশে স্থির হয়ে গেছে । একটির পর একটি অঙ্গ নির্জীব হয়ে পড়ছে অর্থাৎ যতীন দাস ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে  । সমস্ত ভারতবর্ষের মানুষ উদ্বিগ্ন চিত্তে তার স্বাস্থ্যের খবর নিতেন । খবরের কাগজের পাতায় নিয়মিতভাবে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হত । সারা ভারতবর্ষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল ভারতমাতার এই দামাল বীর পুত্রটির তপস্যার প্রতি । এক এক করে সমস্ত অঙ্গ বিকল হয়ে অবশেষে ৬২ দিন অনশন করবার পর ৬৩ দিনের দিন ১৯২৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ০১:০৫ টার সময় লাহোরের বোস্টল জেলে ভারত মায়ের বীর সন্তানের জীবনদীপ নিভে যায় ।

তাঁর মৃত্যুতে অনেকের মনে ছাপ ফেলে দিয়েছিল লাহোর থেকে শেষকৃত্যের জন্য দেহ চলে এল কলকাতায় । ততক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু, দায়িত্ব নিয়ে কাঁধে তুলে নিলেন যতীন দাসের মরদেহ, যাকে দধীচির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি । ধীরে ধীরে সেই বিপুল জনতার মিছিল চলে গেল কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে । ‘ভারতবর্ষ’, ‘প্রবাসী’-সহ বাংলার বহু পত্রিকা ছেয়ে গিয়েছিল তাঁর খবরে ।
অনশন চলাকালীন শান্তিনিকেতনে তপতী নাটকের মহড়া চলছিল, এই ঘটনায় মর্মাহত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাটকের মহড়া বন্ধ রাখেন তিনিও খুব বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং সেই রাতেই রচনা করেন ‘সর্ব খর্ব তারে দহে তব ক্রোধ দাহ’ গানটি , যেটি পরে ‘তপতী’ নাটকে অন্তর্ভুক্ত হয় ।
কাজী নজরুল ইসলাম লিখলেন ‘যতীন দাস’ নামক একটি কবিতা । পরে ‘প্রলয়শিখা’ গ্রন্থে সেটি অন্তর্ভুক্ত করার পর ব্রিটিশ সরকার বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । যতীন দাস তখন সাহসের নাম, বীরত্বের নাম, স্বাধীনতার ধ্বনির নাম । 

স্বাধীনতার পর তার সম্মানে কলকাতা মেট্রোর হাজরা অঞ্চলের মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয় যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশন নামে ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার মত কঠোর  পরিশ্রমি বিপ্লবী খুব কম দেখা গেছে । শহীদ যতীন্দ্র নাথ দাস আমাদের সকলের অন্তরে চিরভাস্বর হয়ে আছেন আর থাকবেন ।
✍️ সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,পূর্ব মেদিনীপুর

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *