ফাইল চিত্র,
আসফাকউল্লা খান
আসফাকউল্লা খান ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগের চরমপন্থী বীর যোদ্ধা যিনি বীর বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের সাথে একই দিনে শহীদ হয়েছিলেন । তাদের উভয়কে একই দিনে আলাদা আলাদা জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো ।
আসফাকউল্লা ছোটো থেকেই ছিলেন দুরন্ত দামাল দুষ্টু ছেলে । গাঁয়ের যেখানে সেখানে যত হৈ হুল্লোড়, দস্যিপনা হত , তার নেতৃত্ব তিনিই দিতেন । তবে শুধু দস্যিপনা নয় অনেক ভালো গুনোও ছিল তাঁর মধ্যে । মনটাও ছিল ফুলের মতো নিষ্পাপ ও কোমল । অপরের দুঃখ কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারতেন না । ছোটোবেলা থেকেই অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা সবসময় করতেন ।
ভারতের মুক্তিযোদ্ধা আসফাকউল্লা খান ছিলেন প্রথম ভারতীয় মুসলিম যাকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো।
জন্ম:
২২ শে অক্টোবর ১৯০০ সাল, শাহজাহানপুর, উত্তর প্রদেশ।
পিতা:
শফিক উল্লা খান পাঠান
মাতা:
মাজহুর -উন-নিসা
আত্মবলিদান :
১৯ শে ডিসেম্বর ১৯২৭ সাল,
ফৈজাবাদ জেল।
আসফাকউল্লার একটি ছোটবেলার কাহিনী শুনলেই বুঝতে পারব তাঁর দুরন্তপনার সাথে সাথে কোমল হৃদয়ের পরিচয় ।
কিশোর আসফাকউল্লা একদিন একদল সঙ্গী সাথীদের নিয়ে প্রতিবেশীর বাগান বাড়িতে গিয়েছিলো আম পাড়তে । গাছের আম ঝুলছে দেখে লোভ সংবরণ করতে না পেরে আম চুরি করলো । তার পর যার বাগান সেই প্রতিবেশী টের পেয়ে তাঁকে শাস্তি দেবার জন্য খুঁজতে লাগলেন । সমস্ত পাড়া খুঁজেও দুষ্টু আসফাকউল্লার সন্ধান না পেয়ে শেষ অব্দি প্রতিবেশী আসফাকউল্লার খোঁজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরে এলেন তাঁর অসুস্থ ছেলের কাছে । বাড়ি ফিরে এসে ওই প্রতিবেশী ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন আসফাকউল্লাকে দেখে । যে দুষ্টু ছেলেটিকে খুঁজতে তিনি সারা পাড়া চষে ফেলেছেন , যাকে শাস্তি দেবার জন্য চেষ্টা করেছেন , সেই ছেলেটি অর্থাৎ আসফাকউল্লা তাঁর অসুস্থ্য পুত্রের শয্যার পাশে বসে এক মনে সেবা করছেন । ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন না , এখন তাঁর কী করা উচিত । আসফাকুল্লাকে শাস্তি দেবেন , নাকি তাঁকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবেন ! এই হলেন আসফাকউল্লা । একদিকে বেপরোয়া দুঃসাহসের প্রতীক , অন্যদিকে কোমল উদারমনা । বজ্রের মতো কঠোর আবার ফুলের মতো সুন্দর , কুসুমের মতো কোমল ।
আসফাকউল্লা ১৯০০ সালের ২২ শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে সম্ভ্রান্ত এক মুসলমান পাঠান পরিবারে । তার পিতা, শফিক উল্লা খান পাঠান পরিবারের মানুষ ছিলেন এবং তার পরিবারও সেই সময় সামরিক দিক দিয়ে বিখ্যাত ছিলো ।
তার পরিবারের অনেকেই ব্রিটিশ সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন । অনেকে ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মচারী । তাই তার পরিবারে স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো পরিবেশ ছিল না । তাছাড়া শাজাহানপুর একটি প্রাচীন পল্লী সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ নিজ নিজ কাজেই ব্যস্ত থাকেন । অনাদৃত উপেক্ষিত ভারতবাসীদের জন্য তাঁদের মনে একটুকু সহানুভূতি অথবা সমবেদনার কোনো স্থান ছিল না ।
তার মায়ের দিক থেকেও পরিবারটি ছিলো অধিক শিক্ষিত এবং অনেক আত্মীয় সেই সময় ব্রিটিশ পুলিশ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেতেন । তার মা মাজহুর-উন-নিসা ছিলেন একজন ধার্মিক নারী । আশফাকউল্লার চার ভাই তিনি ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলো । তার বড় ভাই রিয়াসাত উল্লাহ খান ছিলেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিলের সহপাঠী । যখন মইনপুর ষড়যন্ত্রে বিসমিলকে অভিযুক্ত করা হয়, রিয়াসাত তার ছোট ভাই আশফাককে বিসমিলের উর্দু শায়ের কবিতার শক্তি ও সাহস সম্পর্কে বলেছিলেন । তারপর থেকেই আশফাক বিসমিলের সাথে তার কবিতার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সাক্ষাতে আগ্রহী ছিলেন ।
সেইসময় ধূর্ত ইংরেজ সরকার দ্বিজাতি নীতি প্রয়োগ করেছিল । তারা জানত ভারতবর্ষকে শাসনে রাখতে গেলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে কাল্পনিক ভাবে বিভেদ তৈরী করে রাখতে হবে । মুসলিমদের তোষণ করতে হবে । হিন্দুদের আধিপত্যে মুসলিমরা মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন । তাই ব্রিটিশ সরকার একটি অদ্ভুত নীতি প্রণয়ন করল । তারা সরকারের চাকরিতে আরও বেশি করে মুসলমানদের ঢোকাতে চেষ্টা করল ।
ছোটোবেলা থেকে আসফাকউল্লা ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক, হিন্দু বন্ধুদের সাথে খোলা মনে মেলামেশা করতেন । তার বন্ধুদের বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের । কিশোর আসফাক বুঝতে পেরেছিলেন , তাঁর পরিবারের এইভাবে ইংরেজ তোষণ করা উচিত নয় । তিনি ভাবলেন তাঁর জীবন উৎসর্গ করে তার পারিবরের দেশে বিরোধী কলঙ্ককে মুছে দেওয়ার । পরবর্তী কালে তার ভাবনা বা ইচ্ছা বাস্তবে রূপ পেয়েছিলো ।
দেশ জুড়ে সেই সময় গান্ধীজির ডাকে আন্দোলন শুরু হয়েছে । গান্ধীজি ভারতের স্বাধীনতার জনগণমন অধিনায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছেন । গান্ধীজির ডাকে আসমুদ্র হিমাচল সংগ্রামের ইতিহাসে কম্পিত হল তাঁর আহ্বানে । সেদিনের কিশোর আসফাকউল্লা গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিলেন । যোগ দিলেন অসহযোগ আন্দোলনে । বিদ্যালয় ত্যাগ করলে ।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য আসফাকউল্লা গান্ধীজির অহিংস নীতিকে নিয়ে সংগ্রামে থাকতে পারলেন না তিনি অহিংস পথ বিসর্জন দিয়ে দেশের মুক্তির জন্যে সহিংসের পথ বেছে নিয়েছিলেন । তখন তার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন জেগেছে । তিনি বারবার মনকে শান্ত ও স্থির করবার চেষ্টা করছেন । তিনি ভাবছেন যে , অহিংস নীতি অবলম্বন করলে কি ঈপ্সিত স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব ? পরম শক্তিশালী ইংরেজদের বিরুদ্ধে কি আমরা খালি হাতে লড়াই করতে পারব ? নানান প্রশ্ন তার মনে দাগ কাটতে থাকে । একদিন মধ্যরাতে আসফাকউল্লা স্থির করলেন , অহিংস নীতি পরিত্যাগ করতে হবে । সশস্ত্র সংগ্রামের ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে । ইতিমধ্যে বেশ কিছু সশস্ত্র সংগ্রামীর সাথে তার গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । আসফাকউল্লা বাড়ি ছেড়ে সেইসব বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে শুরু করলেন ।
১৯২২ সালে, যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, বিসমিল জনগণকে আন্দোলন সম্পর্কে বলার জন্য শাহজাহানপুরে সভা সংগঠিত করেন । আশফাক তার সাথে জনসভায় সাক্ষাত করেন এবং নিজেকে তার সহপাঠীর ছোটভাই হিসেবে পরিচয় দেন ।
রামপ্রসাদ ছিলেন সব অর্থেই এক যথার্থ নেতা । যে কোনো তরুণ তরুণীকে চোখের পলকে চিনে নেবার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর । তরুণ আশফাককে দেখে রামপ্রসাদ বুঝতে পারলেন যে , এই তরুণের মনের ভেতর এক টুকরো আগুনের স্ফুলিঙ্গ আছে । ঠিকমতো লালন পালন করতে পারলে আসফাক বিপ্লবী দলের সম্পদ হয়ে উঠবেন । বিপ্লবী হতে গেলে যে সমস্ত গুণাবলী দরকার , সেদিনের সদ্য তরুণ আসফাকের মধ্যে সবকটি গুণ ছিল ।
আসফাক বিসমিলকে আরো বলেন যে, তিনি 'ওয়ার্সি' এবং 'হযরত' ছদ্মনামে কবিতা লিখেন । বিসমিল ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে শাহজাহানপুরে তার কিছু কবিতা শোনেন এবং তারা পরবর্তী সময়ে ভালো বন্ধু হন । আশফাক মাঝেমাঝেই কিছু লিখতেন এবং তা বিসমিলকে দেখাতেন, বিসমিল তা সংশোধন ও উন্নতি সাধন করতেন । এভাবেই দুই কবির এক উন্নতি ঘটে এবং এটি এতোই পরিচিতি পায় যে যারাই তাদের কবিতা কোনো কনফারেন্সে শুনতেন, তারাই উর্দু ভাষায় তাদের মুশায়েরা শুনে বিস্মিত হতেন ।
আসফাক বন্দুক চালানোতে খুবই দক্ষ ছিলেন । ঘোড়ার পিঠে উঠতে পারতেন এবং চোখের নিমেষে ঘোড়াটিকে দূরে নিয়ে যেতে পারতেন । তাছাড়া ভালো সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে অতি দ্রুত দৌড়োনো অনেক গুনের অধিকারি ছিলেন আসফাক । আসফাকের স্বাস্থ্য ছিল খুবই খুব সুন্দর ও সুঠাম । নিয়মিত ব্যায়াম করতেন তিনি । কোনো রকম নেশা ভানের প্রবীত্তি ছিলো না তার মধ্যে । আর সবার ওপরে ছিল জ্বলন্ত দেশপ্রেমে ভরা মানবদরদী মন ।
কিছুদিন বাদে আসফাকউল্লার ওপর একটি কঠিন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল । ইতিমধ্যেই বিপ্লবীরা নানা উপায়ে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে । প্রচুর গোলাবারুদ কিনতে হবে । কীভাবে অর্থ সংগ্রহ করা যায় ? সরকারি অর্থ লুণ্ঠন করতে হবে । বিপ্লবী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আসফাকউল্লা কাকোরি স্টেশনের সামনে একটি ট্রেন থামিয়ে অর্থ লুণ্ঠন করলেন । পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল ।
ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবীদের সাহস দেখে আশ্চর্য হয়েছিলো । ভাইসরয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে নিয়োগ করা হলো মামলাটি তদন্ত করবার জন্যে । এক মাসের মধ্যে সি.আই.ডি সূত্র বের করে ফেলে এবং প্রায় সব বিপ্লবীদের একরাতেই গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেয় ।
এখনই এর বিহিত করা দরকার তাই ইংরেজ পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি শুরু হল । আসফাকের বাড়ি ঘেরাও করা হল কিন্তু আসফাককে ধরা সম্ভব হল না । আসফাক তখন এক পাকা বিপ্লবী , তাঁকে ধরা এত সহজ ছিলো না পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দীর্ঘদিন আসফাক আত্মগোপন করে রইলেন ।
কিশোর বয়স থেকেই আসফাক ছদ্মবেশ ধরতে পারতেন খুব সুন্দরভাবে । আত্মগোপন কালে বেশিরভাগ সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশে থাকতেন । হিন্দু বিপ্লবীদের সঙ্গে তার নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল তাই তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হিন্দু সমাজের সব আচার আচরণ সব কিছু প্রত্যক্ষ করেছিলেন তাই হিন্দু ছদ্মবেশ ধারণ করতে আসফাকের কোনো অসুবিধা হতো না দারুন হবে একজন মুসলিম হিন্দুর বেশে থাকতো কেউ সন্দেহ করতেও পারতো না ।
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫ তারিখ সকালবেলা পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের পুলিস গ্রেপ্তার করে কিন্তু আসফাক ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যার খোঁজ পুলিস পায় নি । আসফাক লুকিয়ে পড়েন এবং বারাণসী যাত্রা করেন, সেখান থেকে বিহারে পালিয়ে যায় এবং সেখানে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে দশ মাস কাজ করেন । তিনি বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তার জন্য লালা হর দয়ালের সাথে সাক্ষাত করতে চেয়েছিলেন । তিনি কীভাবে দেশ ত্যাগ করবেন তা বের করতে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
আসফাক দিল্লিতে চলে এলেন । সেখানে এসে এক মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাস শুরু করলেন । তার সৌম্য আকৃতি , মার্জিত রুচি এবং ভদ্র চালচলন দেখে এক মুসলমান ইঞ্জিনীয়ার এগিয়ে এলেন । সেই ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । ওই ইঞ্জিনিয়ার আসফাককে তাঁর মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চান । আসফাক পড়ে গেলেন মহা মুশকিলে । তিনি এক মহান বিপ্লবী । বিয়ে করে সাংসারিক জীবনের সন্ধান করবেন কেমন করে ? শেষ অব্দি নিরুপায় হয়ে আশফাক নিজের আসল পরিচয় বলতে বাধ্য হলেন । তিনি পরিষ্কারভাবে বললেন আমি বিপ্লবী , যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যু এসে আলিঙ্গন করতে পারে । দোহাই , আমাকে এভাবে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবেন না । আপনার কন্যার এই সর্বনাশ আমি করতে পারব না । আপনার এই আদেশ আমি পালন করতে পারব না , আমাকে মার্জনা করুন । আসফাক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাতে ওই অহংকারী ইঞ্জিনীয়ারের মনে অপমান বোধের জন্ম হলে সেই ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করে পুলিসকে আসফাকের গোপন তথ্য জানিয়ে দেয় এবং আসফাককে পুলিস গ্রেপ্তার করে ।
এর পর বিচারের জন্য আসফাককে দিল্লি থেকে লক্ষ্ণৌতে আনা হল । ট্রেনে তার সঙ্গে এক মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেট ' ভ্রমণ করছিলেন । ঐ মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের মুসলমান অফিসাররা । তারা নানাভাবে সেদিনের তরুণ আসফাকের মনকে বিষিয়ে দেবার চেষ্টা করছিলেন । তারা বললেন , আপনি মুসলমান , আমাদের স্বধর্মী । বিধর্মী হিন্দুদের হাতে হাত মিলিয়ে কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করছেন । হিন্দুদের উদ্দেশ্য কী আপনি জানেন না । তারা ব্রিটিশদের উৎখাত করে ভারতবর্ষের বুকে হিন্দু রাজত্ব স্থাপন করবে । এই কাজে আপনি কেন হিন্দু রামপ্রসাদ বিসমিলকে সাহায্য করছেন ? আসফাকুল্লা দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন শুনুন , আমার কাছে রামপ্রসাদজীর সবচেয়ে বড়ো পরিচয় , উনি একজন খাঁটি বিপ্লবী । যে কোনো মুহূর্তে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠে জীবনের জয়গান গাইতে পারেন । উনি হিন্দু কী মুসলমান , সেটা আমার কাছে কোনো বড়ো কথা নয় । আমাদের দুজনেরই একটাই লক্ষ্য , দেশের স্বাধীনতা । আপনারা বলছেন , ওরা হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় । এটা সম্পূর্ণ অসত্য কথা । আর যদি আপনাদের কথা মেনে নিই , তাহলে বলব , ইংরাজ প্রভুর থেকে হিন্দু প্রভু আমার কাছে বেশি বাঞ্ছনীয় । কারণ হিন্দুরা বিদেশি নয় , তারা আমারই স্বদেশবাসী । ম্যাজিস্ট্রেট বুঝতে পারলেন , এভাবে আসফাকের মন বিষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় । এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন , কোনো উৎকোচ বা প্রলোভনের কাছে যারা মাথা নত করে না , আসফাক হলেন সেই দলভুক্ত ।
তাসাদ্দুক হোসেন, তৎকালীন পুলিস সুপার বিসমিল এবং আসফাকের মধ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিভাজন দেখাতে চেষ্টা করে । "বিসমিলের" বিরুদ্ধে আসফাককে উত্তেজিত করতে চেষ্টা করেন কিন্তু আসফাক ছিলেন দৃঢ়চেতা যিনি এস.পি. তাসাদ্দুক হোসেনকে এই বলে বিস্মিত করেন , "Khan Sahib!, I know Pandit Ram Prasad better than you, he is not such a person as you say but even if you are right then I am also quite sure that as a Hindu, he will be much better than British India to whom you are serving like a servant."
আসফাকউল্লা খানকে ফৈজাবাদ জেলে প্রেরণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। তার ভাই রিয়াসাত উল্লা খান কৃপা শঙ্কর হাজেলা নামে একজন সিনিয়র উকিল নিয়োগ করেন । মি. হাজেলা শেষ পর্যন্ত মামলাটি পরিচালনা করেন কিন্তু তার জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হন । জেলে থাকাকালীন, আসফাক প্রতিদিন কুরআন থেকে তেলাওয়াত করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন ।
বিচারের নামে প্রহসনে আসফাকের ফাঁসির হুকুম হল । কারাগারে একদিন আসফাকের মা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এলেন । ছেলে খুব রোগা হয়ে গেছে দেখে মা খুব কাদতে শুরু করলেন । আসফাক মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন তুমি ভাবছ মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে আমি এমন রোগা হয়ে গেছি ? মোটেই তা নয় । তোমার আসফাক কি কখনও ভয় পেতে পারে মা ? এখানে খুব কম খাওয়া দাওয়া করছি , খাদ্যের সংযম আনছি । তাই আমার এমন চেহারা হয়েছে ।
জেলে থাকার সময় আসফাকের চরিত্রে একটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল । বেশিরভাগ সময় তিনি চোখ বুজে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে থাকতেন । তিনি দিব্য দৃষ্টিতে ভারতের ভবিষ্যত দেখার চেষ্টা করতেন । তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের কৃষিপ্রধান দেশ তাই দেশের উন্নতি করতে হলে কৃষকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করতেই হবে । জেলখানা থেকে এক বন্ধুকে একখানি চিঠি লিখেছিলেন । এই চিঠিতে বলা হয়েছে—
“ভারতের স্বাধীনতা কৃষকদের ওপর নির্ভরশীল । তাই বলি ভাই , তাদের মধ্যে থেকে তাদের জন্যে কাজ করুন, তাদের হতাশ করবেন না । ”
ফাঁসির আগের দিন ফৈজাবাদ জেলে এক বন্ধু এলেন দেখা করতে । আসফাককে দেখে ওই বন্ধু অবাক হয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে মৃত্যুভয় । সমস্ত শরীর দিয়ে একটা তেজ নির্গত হচ্ছে । আসফাকউল্লা বললেন কাল আমার বিয়ের দিন , জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন । আমি তাই আজ খুশিতে অধীর । তুমি দুঃখ করছ ? পরম প্রিয় বন্ধু হিসেবে আমাকে অভিনন্দন জানাও । আমি যেন হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করতে পারি । এই হলেন আসফাকউল্লা , কোনো ভয় তাঁকে বিন্দুমাত্র বিচলিত বা চঞ্চল করতে পারেনি ।
কাকোরী মামলাটিতে চারজন সাহসী বিপ্লবীর মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়ে শেষ হয় । সেই চার জন বিপ্লবী হলেন, পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রাজেন্দ্র লাহিড়ী এবং ঠাকুর রোশন সিং । বাকি ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে চার বছর থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, বুধবার ফাঁসির ঠিক চারদিন আগে, দুজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা যেখানে আসফাক থাকতেন সেই নিঃসঙ্গ সেল দেখতে আসেন । তিনি তখন নামাজের মধ্যে ছিলেন । একজন কর্মকর্তা বিড়বিড় করে বলল যে -
“ আমি দেখতে চাই যখন এই ইঁদুরটিকে ঝোলানো হবে তখন তাঁর কতটুকু বিশ্বাস থাকে । ”
কিন্তু আসফাক তার নামাজ নিয়মমাফিক চালিয়ে গেলেন এবং দুজনই নীরবে বাতাসের মতো মর্মর শব্দ করতে করতে বেরিয়ে গেল ।
১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সোমবার, আসফাকউল্লা খানকে দুই স্তর উপরে বেদিতে নেওয়া হয় । যখন তাকে শিকল থেকে মুক্ত করা হয়, তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বলেন -
“ আমার হাত কোনো মানুষ হত্যা হয়নি । আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানানো । আল্লাহ্ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন । ”
তার পর অবশেষে তিনি আরবি শাহাদাহ্ আবৃত্তি করেন । তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং আন্দোলন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে দেশ হারায়।
উত্তর প্রদেশের কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলায় ফৈজাবাদ জেলে আসফাকুল্লা এবং তার গুরু রামপ্রসাদ বিসমিল এই দুজনকে একসঙ্গে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হল কিন্তু দুজনকে দুটি আলাদা জেলে ।
ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করে আসফাক উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন ভারত স্বাধীন হোক । বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক । ভারতীয়রা সুখে থাকুক । ভারতের বিপ্লবে অংশ গ্রহণের জন্য প্রথম মুসলমান হিসেবে ফাঁসিতে যেতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি । খ্যাতনামা বিপ্লবী শহীদ আসফাকুল্লার আত্মবলিদানে উজ্জীবিত হয়ে ভারতের অসংখ্য মুসলিম যুবক স্বাধীনতার এই মহান যজ্ঞে আত্মাহুতি দিয়েছেন । তাঁদের কথা স্বর্ণাক্ষরে অক্ষরে লিখিত আছে ভারতে স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় ।

ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,পূর্ব মেদিনীপুর
🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in
