ফাইল চিত্র,
বিপ্লবী বাল গঙ্গাধর তিলক
বাল গঙ্গাধর তিলক বা লোকমান্য তিলক নামে পরিচিত সকলের কাছে । প্রকৃত নাম ছিল কেশব গঙ্গাধর তিলক। একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা , শিক্ষক এবং একজন স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী ছিলেন । তিনি লাল বাল পাল নামের ত্রয়ীর এক জন ছিলেন । তিলক ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা । তিনি সারা জীবন ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের হাত থেকে ভারত বাসীকে রক্ষা করবার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ তাকে "ভারতীয় অশান্তির জনক" বলে অভিহিত করেছিল । তাঁকে "লোকমান্য" উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল, যার অর্থ "জনগণ তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করেছেন" । মহাত্মা গান্ধী তাঁকে "আধুনিক ভারতের নির্মাতা" বলে সম্বোধন করেছিলেন ।
জন্ম:
২৩ শে জুলাই ১৮৫৬ সাল,
চিখরগাঁও, রত্নগিরি জেল, মহারাষ্ট্র ।
প্রয়াণ :
১ লা আগস্ট ১৯২০ সাল, মুম্বাই, মহারাষ্ট্র ।
পিতা : শ্রী গঙ্গাধর রামচন্দ্র তিলক
মাতা : পার্বতী বাই তিলক ,
স্ত্রী: সত্যভামা বাই তিলক
বাল গঙ্গাধর তিলকের অমর অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি--
" স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং এই অধিকার আমার প্রাপ্য "
বিপিন চন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায়, অরবিন্দ ঘোষ, ভি ও চিদাম্বরম পিল্লাই এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সহ তিনি বহু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ মেলা মেসা করেছিলেন তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন ।
বাল গঙ্গাধর তিলকের জন্ম হয় ১৯৫৬ সালের ২৩ শে জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার চিখরগাঁও গ্রামের এক মারাঠি হিন্দু চিতপাভন ব্রাহ্মণ পরিবারে । তাঁর পিতা, গঙ্গাধর রামচন্দ্র তিলক ছিলেন একজন আদর্শ বাদী স্কুল শিক্ষক এবং সংস্কৃত পন্ডিত । তাঁর বাবা শিক্ষকতার মাধ্যমে বেশি অর্থ উপার্জন করবার পক্ষপাতি ছিলেন না , তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন শিক্ষকতা শুধু একটা পেশা নয় এটি একটি মহান আদর্শ গত পেশা যার মধ্যদিয়ে দেশের প্রকৃত উত্তম পুরুষের আবির্ভাব ঘটানো সম্ভব হবে । তিলকের পিতা গঙ্গাধর ছিলেন অত্যন্ত তেজস্বী, উদার মনের অধিকারী , প্রগতি শীল , সাংস্কৃতিক ভাবধারার সাথে যুক্ত একজন দৃঢ় পুরুষ । সামাজিক অন্যায় এবং অবিচারের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়াতেন । বিরুদ্ধপন্থীদের সাথে কখনই আপােস করতেন না । শত কষ্ট সহ্য করেও সবসময় নিজ সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতেন । এছাড়া সংস্কৃত ব্যাকরণে বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার । তাই অনেকে তাকে শাস্ত্রী গঙ্গাধর রামচন্দ্র বলে ডাকতেন । রত্নগিরি জেলার স্কুলে কয়েক বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি সহকারী ডেপুটি ইন্সপেক্টার হলেন । বাবার কাছ থেকে তিলক সমস্ত গুণগুলি অর্জন করেছিলেন । তিলকের ঠাকুরদা কেশবরাও ছিলেন বিশাল কবিত্ব শক্তি অধিকারী । কেশব রাও - এর বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিলো । পরবর্তীকালে তিলক এক যশস্বী গদ্য ও কবিতার লেখক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন । অনেকে বলে থাকেন , পিতামহের কাছ থেকেই তিনি এই গুণটি করায়ত্ব করেছিলেন ।
তিলক বাবার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ সহ সংস্কৃতের শিক্ষা লাভ করেছিলেন । এরপর সংস্কৃত ভাষা ধীরে ধীরে আয়ত্ত করেন তার ফলে সংস্কৃতে সাবলীল ভাবে অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন তিনি । ইংরাজি ভাষার প্রতিও তিলকের বিশেষ আগ্রহ ছিল । তিলকের বাবা ছিলেন বাস্তববাদী মানুষ তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে , ইংরাজি ভাষায় জ্ঞান অর্জন না করলে পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে নিজেকে মানানাে সম্ভব হবে না । তাই তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিলক ইংরাজি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন । শিক্ষালাভের গােড়ার দিকে বালগঙ্গাধর তিলক তাঁর বাবা এবং ঠাকুরদার কাছ থেকে বিশেষ উৎসাহ পেয়েছিলেন । যখন তিলকের বয়স মাত্র চার বছর তখন তার বাবা প্রতিদিন একটি করে মারাঠি শ্লোক তিলককে মুখস্থ করার জন্য দিত মুখস্ত বলতে পারলে তাঁর বিনিময়ে পয়সা দিতেন । পাঁচ বছর বয়সে তিলক পাঠশালায় ভর্তি হন । ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু শ্লোক কণ্ঠস্থ করেছেন । বর্ণ পরিচয় শিখেছেন এবং মৌখিক অঙ্কের পাঠ শেষ করেছেন । নয় বছর বয়েসে ক্লাসের পড়ার বাইরে বেদের কিছু অংশ মুখস্থ করে ফেলেন । দশবছর বয়সে পড়ে ফেলেন মহাভারত, গীতা । তিলকের স্মরণশক্তি ছিল খুবই প্রখর । একবার যা পড়তেন , তা মনে রাখতে পারতেন দীর্ঘ দিন । শিক্ষকদের কাছে তিনি ছিলেন এক আদর্শ ছাত্র ।
লেখা পড়ার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও নিজেকে আত্মনিয়ােগ করে রেখেছিলেন । কোথাও কোনাে মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে , কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন এই খবর তার কানে এলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেতেন । সাধ্যমতাে অর্থ সহ অনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করতেন । সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেছিলেন । তিনি অন্তরালে থেকে এই বাহিনীকে পরিচালনা করতেন । অনেক বড়াে মাপের মানুষ নিজে থেকে এই বাহিনীতে নিয়মিত অর্থদান করতেন । এভাবেই তিলক একটি শােষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন ।
ষােলাে বছর বয়েসে কৃতিত্বেরসঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । এই পরীক্ষা দেবার চার মাস আগে তিলকের জীবনে একটি শােকাচ্ছন্ন ঘটনা ঘটে যায় । যে বাবাকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সেই বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন, অসহায় বোধ করেছিলেন ।
১৮৭১ সালে, তিলক তার বাবার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ষোল বছর বয়সেই তপিবাইয়ের সাথে বিবাহ করেছিলেন কিন্তু বিবাহের পরে তপিবাইয়ের নাম বদলে সত্য ভামবাভাই দেবী রাখা হয়েছিলো । তিনি ১৮৭৭ সালে পুনের ডেকান কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । তিনি এল.এল.বি কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়া শুনা শুরু করেন । ১৮৭৯ সালে তিনি সরকারী আইন কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । স্নাতক শেষ করার পরে, তিলক পুনের একটি বেসরকারী স্কুলে গণিতের পাঠদান শুরু করেছিলেন । পরে নতুন স্কুলে সহকর্মীদের সাথে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তিনি সরে এসে সাংবাদিক হন ।
বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুনকারের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৮৮০ সালে গোপাল গণেশ আগরকর , মহাদেব বল্লাল নামজোশি এবং বিষ্ণুশ্রী চিপলুঙ্কার সহ তাঁর কলেজের কয়েকজন বন্ধুদের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য নিউ ইংলিশ স্কুলটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের যুবকদের জন্য শিক্ষার মান উন্নত করা । স্কুলটির সাফল্য তাদের ১৮৮৪ সালে ডেকান এডুকেশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিল যাতে একটি নতুন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল যা ভারতীয় সংস্কৃতিতে জোর দেওয়ার মাধ্যমে তরুণ ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী ধারণা শেখায় ।
১৮৮৫ সালে পোস্ট-সেকেন্ডারি পড়াশুনার জন্য ফার্গুসন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে । তিলক ফার্গুসন কলেজে গণিত পড়াতেন । ১৮৯০ সালে, তিলক আরও প্রকাশ্য রাজনৈতিক কাজের জন্য ডেকান এডুকেশন সোসাইটি ত্যাগ করেন । তিনি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের উপর জোর দিয়ে স্বাধীনতার দিকে একটি গণআন্দোলন শুরু করেছিলেন ।
ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল তিলকের কৈশােরকাল । এবার তিনি যৌবনের যুবরাজ্যে প্রবেশ করেছেন । আমরা অন্য এক তিলকের সন্ধান পেলাম । প্রকাশিত হল মারাঠি ভাষায় ‘ কেশরী এবং ইংরাজি ভাষায় ‘ মারহাট্টা নামে দুটি কাগজ । তিলকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হল । সারা দেশ জুড়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল । শুরু করলেন শিবাজী উৎসব এবং গণপতি উৎসব । ১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের জয়যাত্রা সবে শুরু হল । তিলক একজন সাধারন কর্মী হিসাবে কংগ্রেসে যােগ দিয়েছিলেন ১৯০৭ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেসে চরমপন্থীদল গঠন করেন ও হােমরুল আন্দোলনের সৃষ্টি করেন । ১৮৮২ খ্রীঃ কোলাপুর মানহানি এবং ১৮৯৭-৯৮ খ্রীঃ রাষ্ট্রবিরােধী ষড়যন্ত্রের অভিযােগে ও ১৯০৮-১৯১৪ খ্রীঃ পর্যন্ত রাজদ্রোহাত্মক অপরাধের অভিযােগে কারাদন্ড ভােগ করতে হয় । এইভাবে ক্রমাগত বন্দি থাকার ফলে বন্দি জীবনই তার কাছে হয়ে উঠেছিল পরিচিত গার্হস্থ্য জীবন ।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য তিলকের দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই ও সংগ্রাম ছিল । গান্ধীজির আগে তিনি ছিলেন সর্বাধিক পরিচিত ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা । তাঁর সহযোদ্ধা মহারাষ্ট্রীয় সমসাময়িক গোখলেদের বিপরীতে , তিলককে একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী কিন্তু সমাজ রক্ষণশীল বলে বিবেচনা করা হত । তিনি বেশ কয়েক বার কারাবরণ করেছিলেন যার মধ্যে মান্ডলে একটি দীর্ঘকালীন অন্তর্ভুক্ত ছিল । তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক পর্যায়ে তাকে ব্রিটিশ লেখক স্যার ভ্যালেন্টাইন চিরল "ভারতীয় অশান্তির জনক" বলে ডেকেছিলেন।
তিলক ১৮৯০ সালে ভারতেয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন । তিনি এর মধ্যপন্থী মনোভাবের বিরোধিতা করেছিলেন । বিশেষত স্বশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি তিনি তখনকার অন্যতম বিশিষ্ট ও প্রকৃত নেতা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ১৯০৫-১৯০৭ এর মধ্যবর্তি সময়ের স্বদেশী আন্দোলনই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে মধ্যপন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো ।
১৮৯৬ এর শেষের দিকে, একটি বুবোনিক প্লেগ বোম্বাই থেকে পুনেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮৯৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে তা মহামারী আকারে পৌঁছে যায় । জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আনা হয়েছিল এবং বেসরকারী বাড়িতে প্রবেশের জন্য বাধ্যতামূলক প্রবেশের ভাতা, বাড়ির দখলদারিদের পরীক্ষা, হাসপাতাল ও কোয়ারানটাইন শিবিরগুলিতে সরিয়ে নেওয়া, ব্যক্তিগত অপসারণ ও ধ্বংসসহ প্লেগ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল । সম্পত্তি, এবং রোগীদের শহরে প্রবেশ বা ছাড়তে বাধা দেয় । মে মাসের শেষে, মহামারী নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো কিছুটা । মহামারী নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলি ভারতীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল ।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, ভগবদ গীতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিলক তাঁর কাগজ "কেশারী " মারাঠি ভাষায় লেখা হয়েছিল এবং "মারহাট্টা " ইংরেজী ভাষায় লেখা প্রদাহমূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন উক্ত বিষয়ের উপর ।
এরপরে, ১৮৯৭ সালের ২২ শে জুন, কমিশনার র্যান্ড এবং আরেক ব্রিটিশ কর্মকর্তা লেঃ আয়ার্সেটকে চাপেকর ভাই এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীরা মিলে গুলি করে হত্যা করে । বারবারা এবং থমাস আর মেটকল্ফের মতে, তিলক হত্যাকারীদের জানত চিনত সে "অবশ্যই দোষীদের পরিচয় গোপন করেছিলেন" তারা তিলককে হত্যার জন্য প্ররোচিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং তাকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল । বর্তমান মুম্বাইয়ের কারাগার থেকে যখন তিনি মুক্ত হয়ে ছাড় পাচ্ছিলেন , তখন তিনি একজন জাতীয় বীর হিসাবে সম্মানিত হয়েছিলেন ।
তিনি তাঁর এই অমর বানীতি সকলের সামনে তুলে ধরেন........
" স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং এই অধিকার আমার প্রাপ্য "
এই কথা উল্লেখ করে বলেন । তাঁর এই প্রেরণাদায়ক শব্দবন্ধগুলি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন কে ত্বরান্বিত করেছিল এবং এই উদ্ধৃতিটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল ।
বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার একটি কৌশল ছিল লর্ড কার্জনের । তিলক স্বদেশী আন্দোলন এবং বিদেশী পণ্য বয়কট আন্দোলনকে উৎসাহিত করেছিলেন । এই আন্দোলনে বিদেশী পণ্য বর্জন এবং বিদেশী পণ্য ব্যবহার করা যে কোনও ভারতীয়ের সামাজিক বর্জন অন্তর্ভুক্ত ছিল । তিলক বলেছিলেন যে স্বদেশী এবং বয়কটের আন্দোলন একই মুদ্রার দুটি পিঠ ।
পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায়, মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক এবং বাংলার বিপিন চন্দ্র পাল, এই ত্রৈয়ী লাল বাল পাল নামে খ্যাত ।
তিলক গোপাল কৃষ্ণ গোখলের মধ্যপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেছিলেন এবং বাংলায় তাঁর সহকর্মী জাতীয়তাবাদী বিপিন চন্দ্র পাল এবং পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায়কে সমর্থন করেছিলেন । তাদেরকে "লাল-বাল-পাল " হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল । ১৯০৭ সালে, কংগ্রেস পার্টির বার্ষিক অধিবেশন গুজরাটের সুরাট শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল । মধ্যপন্থী দলের উগ্রপন্থী অংশগুলির মধ্যে কংগ্রেসের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ঝামেলা শুরু হয়েছিল । দলটি তিলক, বিপিন পাল ও লাজপত রাইয়ের নেতৃত্বে এবং মধ্যপন্থী গোষ্ঠীতে আদি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে । অরবিন্দ ঘোষ, ভি ও চিদাম্বরম পিল্লির মতো জাতীয়তাবাদীরা ছিলেন তিলকের সমর্থক ।
কলকাতায় যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি স্বাধীন ভারতের জন্য মারাঠা ধরণের সরকার সম্পর্কে ধারণা করেছেন, তখন তিলক উত্তর দিয়েছিলেন যে মরাঠ-অধ্যুষিত সরকারগুলি বিংশ শতাব্দীতে সতের ও আঠারো শতকের গঠনতন্ত্র তৈরি করেছিল এবং তিনি মুক্ত ভারতের জন্য একটি আসল ফেডারেল ব্যবস্থা চান যেখানে সবাই ছিল সমান অংশীদার । তিনি আরও যোগ করেন যে কেবলমাত্র এই জাতীয় সরকারই ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম হবে । তিনিই প্রথম কংগ্রেস নেতা যিনি দেওয়ানগরী লিপিতে রচিত হিন্দিকে ভারতের একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসাবে গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ।
অন্যান্য রাজনৈতিক মামলার মধ্যে তার জীবদ্দশায় তিলকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার তিনবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচার করেছিল - ১৮৯৭, ১৯০৯, এবং ১৯১৬ সালে। ১৮৯৭ সালে, তিলককে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে অশোভন প্রচারের জন্য ১৮ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল । ১৯০৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আবারও রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ভারতীয় ও ব্রিটিশদের মধ্যে বর্ণ বৈরিতা তীব্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় । বোম্বে আইনজীবী মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তিলকের প্রতিরক্ষায় হাজির হলেও বিতর্কিত রায়ে তাকে বার্মার ছয় বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল । ১৯১৬ সালে যখন তৃতীয়বারের মতো তিলকের বিরুদ্ধে স্বশাসনের বিষয়ে বক্তৃতার বিষয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তখন জিন্নাহ আবার তাঁর আইনজীবী হয়েছিলেন এবং এই সময় তাকে মামলায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল, কলকাতার খ্যাত চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বোস, মুজফফরপুরে একটি গাড়ীর উপরে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন, কিন্তু সেখানে ভুলবসত ভ্রমণকারী দুই মহিলার হত্যা হয়েছিলো । ধরা পড়লে প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন আর ক্ষুদিরাম বোসকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল । এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন প্রতিবাদ স্বরূপ তিলক তাঁর কশারি পত্রিকায় বিপ্লবীদের রক্ষা করেবার জন্যে তৎক্ষণিক স্বরাজ বা স্ব-শাসনের আহ্বান জানান । সরকার তাকে দ্রুত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে । বিচারের শেষে, একটি বিশেষ জুরি তাকে 7: 2 সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা দোষী সাব্যস্ত করে । বিচারক, দিনশো ডি দাবার তাকে বার্মার মান্দালেতে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার ডলার হিসাবে জরিমানা করেছিলেন । বিচারক তাঁর কাছে জানতে চাইলে তার কিছু বলার আছে কি না,তার উত্তরে তিলক বলেছিলেন -
" আমি এখনও বলছি, আমি কোন অপরাধ করিনি। আদালতের থেকে উচ্চতর শক্তি আছে যা মানুষ ও জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। আমি মনে করি ঈশ্বরের ইচ্ছাও এমন হতে পারে যে আমার কথা ও কলমে যা আমি পারিনি, আমার এই প্রাপ্ত যন্ত্রনা তার থেকে বেশীই করে দেবে। " ।
মামলায় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন তাঁর আইনজীবী । বিচারপতি দাওয়ারের রায় প্রেসের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে এবং ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে দেখা যায় । এর আগে বিচারপতি দাওয়ার নিজে ১৮৯৭ সালে প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তিলকের পক্ষে হাজির হয়েছিলেন । সাজা দেওয়ার সময়, বিচারক তিলকের আচরণের বিরুদ্ধে কিছু কঠোর কঠোরতায় জড়িয়ে তিনি বিচার বিভাগীয় প্রতিবন্ধকতাটি বাতিল করে দিয়েছিলেন যা কিছুটা হলেও বিচারব্যবস্থায় তার দায়িত্বে পর্যবেক্ষণযোগ্য ছিল । তিনি নিবন্ধগুলিকে "রাষ্ট্রদ্রোহের সাথে সিদ্ধি" হিসাবে সহিংসতার প্রচার হিসাবে, অনুমোদনের মাধ্যমে খুনের কথা বলে নিন্দা করেছিলেন । "আপনি ভারতে বোমার আগমনের প্রশংসা করেছেন যেন এমন কিছু ঘটেছিল যার ভালোর জন্য ভারতে এসেছিল । আমি বলি, এ জাতীয় সাংবাদিকতা দেশের জন্য একটি অভিশাপ"। তিলককে ১৯০৮ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত মান্দালে প্রেরণ করা হয়েছিল । কারাবন্দী থাকাকালীন তিনি পড়তে এবং লিখতে থাকেন, ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি আরও বাড়িয়ে তোলেন । কারাগারে থাকাকালীন তিনি গীতা রহস্য রচনা করেছিলেন । যার অনেকগুলি কপি বিক্রি হয়েছিল এবং এই অর্থটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য দান করা হয়েছিল।
তিলক মন্ডলে কারাগারে সাজা থাকাকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্ত করেছিলেন। এবং কারাগারের জীবনের সাধারণ অগ্নিপরীক্ষা তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল ১৯ জুন ১৯৪৪ সালে। যখন সেই বছরের আগস্টে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তিলক রাজা-সম্রাট পঞ্চম জর্জকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং তার জন্য নতুন নতুন নিয়োগের সন্ধানের জন্য তাঁর বক্তৃতাটি চালু করেছিলেন । যুদ্ধ প্রচেষ্টা তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্টকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, যা মিন্টো-মর্লি সংস্কার নামে পরিচিত, এটি ১৯০৯ সালের মে মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা পাস করা হয়েছিল এবং এটিকে "শাসক ও শাসকদের মধ্যে আস্থাভাজনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি" হিসাবে অভিহিত করেছিলো । রাজনৈতিক দৃঢ় সংস্কারের গতি ত্বরান্বিত করার চেয়ে সহিংসতার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে হ্রাস পেয়েছিল এটাই তার দৃঢ় বিশ্বাস । তিনি কংগ্রেসের সাথে পুনর্মিলনের জন্য উদগ্রীব ছিলেন এবং সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ত্যাগ করেছিলেন এবং "কঠোরভাবে সাংবিধানিক উপায়ে" আন্দোলনের জন্য মীমাংসা করেছিলেন - এমন একটি লাইন যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী গোখলে দীর্ঘকাল ধরে সমর্থন জানিয়েছিল। তিলক ১৯১৬ এর লখনউ চুক্তি চলাকালীন তাঁর সহযোগী জাতীয়তাবাদীদের সাথে পুনরায় মিলিত হয়ে পুনরায় ইন্ডিয়ান জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিলেন।
তিলক মোহনদাস গান্ধীকে সম্পূর্ণ অহিংসার "পূর্ণ অহিংসা" ধারণাটি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলেন এবং যেকোনো উপায়ে স্ব-শাসন "স্বরাজ্য" পাওয়ার চেষ্টা করার কথা বলেছিলেন । যদিও গান্ধীজি তিলকের সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি । স্বশাসন অর্জনের জন্যে তিনি সত্যাগ্রহের পক্ষেই ছিলেন, গান্ধীজি তিলকের দেশের জন্য আত্মত্যাগ, দৃঢ় বিশ্বাসের ও সাহসের প্রশংসা করেছিলেন ।
তিলক ১৯১৬-১৯১৮ সালে জি এস খপার্ডে এবং অ্যানি বেসান্তের সাহায্য নিয়ে অল ইন্ডিয়া হোম রুল লিগ তৈরী করেছিলেন । কয়েক বছর ধরে মধ্যপন্থী ও উগ্রপন্থী দলগুলিকে পুনরায় একত্রিত করার চেষ্টা করার পরে স্ব-শাসন চেয়ে হোম রুল লীগের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন । স্বশাসনের জন্যে আন্দোলনে যোগ দিতে ও স্থানীয় কৃষকদের সহায়তার জন্য তিলক গ্রাম গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন । তিলক সেই সময় রাশিয়ান বিপ্লব দেখে মুগ্ধ হয়ে ভ্লাদিমির লেনিনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিলেন । ১৯১৬ সালের এপ্রিলে এই লিগের সদস্য সংখ্যা ছিলো ১,৪০০ এবং ১৯১৭ সালে সেই লিগের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩২,০০০ । তিলক মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ এবং কর্ণাটক এবং বেরার অঞ্চলে তার হোম রুল লীগ শুরু করেছিলেন ।
১৯১৪ সালে কারামুক্তির পর তিলক ১৯১৮ সালে বিলাত যান । জাতীয়তাবাদী তিলকের সঙ্গে শ্যামজী কৃষ্ণবর্মা , বিপ্লবী বীর সাভারকর প্রমুখের সঙ্গেও বিভিন্নক্ষেত্রে যােগাযােগ স্থাপিত হয়েছে । সাভারকর প্রতিষ্ঠিত মিত্র মেলা ও অভিনব ভারত নামে গুপ্ত সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন ।
তিলক পুনেতে উদারনিত প্রবণতা যেমন নারী অধিকার এবং অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সামাজিক সংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন । তিলক ১৮৮৫ সালে পুনেতে প্রথম নেটিভ গার্লস হাই স্কুল (বর্তমানে হুজুরপাগা নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠার এবং তার পত্রিকা মহরত এবং কেশারি ব্যবহার করে এর পাঠ্যক্রমের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন । তিলক আন্তঃবিবাহ বিবাহেরও বিরোধিতা করেছিলেন, বিশেষত সেই ম্যাচ যেখানে একটি উচ্চবর্ণের মহিলা নিম্ন বর্ণের পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন । দেশস্থ, চিতপাওয়ান ও করহাদেসের ক্ষেত্রে তিনি এই তিনটি মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ দলকে "বর্ণের একচ্ছত্রতা" এবং বিবাহবিবাহ বন্ধ করতে উৎসাহিত করেছিলেন । তিলক আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি বিলের বিরোধিতা করেছিলেন যা মেয়েদের বিবাহের বয়স দশ থেকে বারো পর্যন্ত বাড়িয়েছিল । তবে তিনি একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি ছিলেন যা মেয়েদের বিয়ের বয়স ষোল এবং ছেলের জন্য বিশে বাড়িয়েছিল । তিনি সামাজিক সংস্কারকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিলেন কিন্তু তার মতে স্ব-শাসন যে কোনও সামাজিক সংস্কারের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছিল পুরো তিলক সামাজিক সংস্কারের বিরোধী ছিল না । তিনি সম্মতি বিলের বয়সের বিরোধী হলেও তিনি পনেরো বছর বয়সে তাঁর মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি বিধবা বিবাহকেও সমর্থন করেছিলেন । ধোন্দো কেশব কারভে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি যখন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে একজন বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন । তিনি সামাজিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন তবে ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ছিলেন।
তিলক এবং স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে একে অপরের প্রতি অত্যন্ত পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান ছিল গভীর । ১৮৯২ সালে ট্রেনে ভ্রমণের সময় তাদের দুর্ঘটনাক্রমে দেখা হয়েছিল তাঁদের দুজনের ।তিলকের বাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দ অতিথি হিসাবে কিছুদিন ছিলেন । সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি বসুকাকা শুনেছিলেন যে বিবেকানন্দ এবং তিলকের মধ্যে অনেক আলোচনার পর তাঁরা একমত হয়েছিল যে তিলক "রাজনৈতিক" অঙ্গনে জাতীয়তাবাদের দিকেনিয়ে কাজ করবেন আর স্বামী বিবেকানন্দ "ধর্মীয়" অঙ্গনে জাতীয়তাবাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করবেন । কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের খুব অল্প বয়সে প্রায়ন হয়েছিল তাতে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন তিলক এবং তার কেশরী পত্রিকাতে দুঃখ প্রকাশ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন ।
১৮৯৫ সালে, তিলক মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজির জন্মবার্ষিকী "শিব জয়ন্তী" উদযাপনের জন্য শ্রী শিবাজি তহবিল কমিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই প্রকল্পের রায়গড় দুর্গে শিবাজির সমাধি পুনর্নির্মাণের অর্থায়নেরও লক্ষ্য ছিল । দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে তিলক শ্রী শিবজী রায়গড় স্মারক মন্ডল এবং তালেগাঁ দভাদের সেনাপতি খন্দেরও দভাদের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যিনি মণ্ডলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছিলেন।
গণপতি উৎসব এবং শিব জয়ন্তির মতো ঘটনাগুলি তিলক ব্যবহার করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে শিক্ষিত অভিজাতদের বৃত্তের বাইরে জাতীয় চেতনা গড়ে তুলতে । তবে এটি হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে । শিবসেনার মতো সমসাময়িক মারাঠি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলি শিবাজির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা গ্রহণ করেছিল ।
তিলক বলেছিলেন -
"আমি ভারতকে আমার মাতৃভূমি এবং আমার দেবী হিসাবে গণ্য করি, ভারতের মানুষ আমার আত্মার আত্মীয়, এবং তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য অনুগত ও অবিচল কাজ আমার সর্বোচ্চ ধর্ম এবং কর্তব্য "।
১৯০৩ সালে, তিলক "বেদের মধ্যে আর্টিক হোম" বইটি লিখেছিলেন । তিনি বেদের সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেছিলেন "দ্য ওরিয়ন" -তে তিনি বিভিন্ন নক্ষত্রের অবস্থান ব্যবহার করে বেদের সময় গণনা করার চেষ্টা করেছিলেন । নক্ষত্রের অবস্থানগুলি বিভিন্ন বেদে বর্ণিত হয়েছিল । তিলক মণ্ডলে কারাগারে " শ্রীমদ ভগবদ গীতা রহস্য" লিখেছিলেন - ভগবদ গীতাতে 'কর্ম যোগ' বিশ্লেষণ, যা বেদ এবং উপনিষদের উপহার হিসাবে পরিচিত ছিলো ।
তিলকের পুত্র শ্রীধর আর শ্রীধরের পুত্র জয়ন্তরাও তিলক (১৯২১-২০০১) বহু বছর ধরে কেশারি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন । জয়ন্তরাও কংগ্রেস দলের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন । তিনি ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী ভারতের সংসদ সদস্য ছিলেন । তিনি মহারাষ্ট্র আইন পরিষদের সদস্যও ছিলেন।
তাঁর জীবনে বেশ কয়েকটি ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: ডকুমেন্টারি ফিল্মগুলি লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক (১৯৫১) এবং লোকমান্য তিলক (১৯৫৭) উভয়ই বিশ্রাম বেদেকের, লোকমান্য: ওম রাউতের এক যুগপুরশ (২০১৫) এবং দ্য গ্রেট ফ্রিডম ফাইটার লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক - স্বরাজ আমার জন্মের অধিকার (২০১৮) বিনয় ধূমলে।
উগ্রজাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক বলে স্বীকৃতি লাভ করলেও তিনি বিপ্লবের কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক মতবাদ , পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেননি । কিন্তু তার স্বদেশপ্রেম অসাধারণ বাগ্মিতা বহু দেশপ্রেমিক নেতা ও কর্মীকে অনুপ্রানিত করেছে । সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী জনগনকে সঙ্গে নিয়ে চলার বাস্তবতা তিনি বারবার স্বীকার করেছেন । রাজনৈতিক চিন্তা ও চেতনায় মহাত্মার সঙ্গে পার্থক্য থাকলেও অসহযােগ আন্দোলনের পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান । ১৯২০ খ্রীঃ ১ লা আগস্ট সুবিখ্যাত মনীষী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লােকমান্য তিলক অমৃতলােকে যাত্রা করেন ।

ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার,
পূর্ব মেদিনীপুর
🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in
