

ক্ষুদিরাম বসু
জন্ম - 03.12.1889 মৃত্যু - 11.08.1908.
পিতা-ত্রৈলক্যনাথ।
মাতা-লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।
মেদিনীপুরের দামাল ছেলে শহীদ ক্ষুদিরাম
সত্যেন বসুর মন্ত্র শিষ্য ত্রৈলক্য-সন্তান।
বড় দিদি অপরূপার ক্ষুদে কেনা ভাই
জন্ম দিয়েও লক্ষ্মীপ্রিয়ার অধিকারটি নেই।
ভগ্নিপতি অমৃতলালের মোটেও পচ্ছন্দ নয়
তাঁর পুত্র ভীমাচরণ মামার সাথী হয়।
স্বদেশীয়ানা ক্ষুদির থেকে পাছে ভীমে লাগে
বড্ড ভয় চাকুরীজীবী-ইংরেজ পাছে রাগে।
তমলুক থেকে মেদিনীপুরে ক্ষুদি হ'লে আনা
কলিজিয়েট স্কুলে পেল জ্ঞানেন্দ্রে নিশানা।
বিপ্লবের মন্ত্র দীক্ষা সত্যেন্দ্র সকাশে
অগ্নিশিশু ক্ষুদিরাম ক্রমেই ঝলসে।
সমিতির দ্রোণাচার্য্য হেমচন্দ্র দাস (কানুনগো)
বিপ্লবীদের সর্ববিদ্যা করাতেন অভ্যাস।
লাঠিখেলা, রণপা দৌড়, সাইকেলের কসরত
ঘোড়ায় চড়া-বন্ধুক-বক্সিং এ নিপুণ কারিগর।
কেমন পারদর্শী ক্ষুদি?কেমন হলো জানো?
কলিজিয়েটের ব্যায়াম শিক্ষক রামচরণকে চেনো?
প্যারালাল বরে ক্ষুদির খেলায় ছোটলাট প্রীত ব'লে
এক ধাক্কায় রামের বেতন পাঁচ টাকা গেল বেড়ে।
জানবে নাকি ক্ষুদি হ'ল কেমন বাহাদুর?
একরাতেই সাইকেল রণপায় তমলুক- মেদিনীপুর।
তাইতো ক্ষুদি এক সময়ে মুগবেড়িয়াতে গিয়ে
তিন লেঠেলের মোকাবিলায় একা-সাবাশ ছেলে।
ধন্য বটে মেদিনীপুর, ধন্য এগরায় ক্ষুদিরাম
কৃষ্ণসাগরে পিটিয়ে সিপাহী-বাড়ায় জাতির মান।
তমলুক মুগবেড়িয়া ভগবানপুর পটাশপুর
তার আখড়া উজিয়ে দিল বিপ্লবেরই সুর।
বন্যা খরার মোকাবিলায় আছেই আছে ক্ষুদি
পিকেটিং এ বহ্নুৎসবে নেইকো কোন জুড়ি।
মেলায় মেলায় বিপ্লবী প্রত্রিকা ছড়িয়ে দিতে
ঝুঁকি ভুলে ক্ষুদিরাম সবখানেতেই আগে।
অত্যাচারী কিংসফোর্ড আর পৃথিবীতে নয়
আদেশনামায় অরবিন্দ এমন ধারাই কয়।
এমন কাজের দায়িত্ব তো নেবেই মেদিনীপুর
সত্যেন ডাকে হাজির ক্ষুদি ছেড়ে কিশোরপুর।
যাবার বেলায় আশু দে জানতেন কোথায় যায়?
সিল্কের চাদর, ছড়ি দিয়ে বিদায় জানায়।
জীবন-মৃত্যু সত্যি এঁদের পায়ের ভৃত্য হয়,
"যাচ্ছি এবার বিয়েতে ভাই"-পরিহাসে কয়।
ক্ষুদিরামের পরিচয় হ'ল হরেন সরকার
প্রফুল্লের নতুন নাম দীনেশচন্দ্র রায়।
মজঃফরপুরে দোঁহে তক্কে তক্কে থাকে
অত্যাচারী কিংসফোর্ড কখন কোথায় থাকে।
এপ্রিল ত্রিশ ঊনিশ'শ আট ছুঁড়ল দোঁহে বোমা
কিংসফোর্ড নয় কেনেডিরা পড়ল তাতে মারা।
পেটের জ্বালা বড়ই জ্বালা মুড়ি কিনতে গিয়ে
পুলিশের চরে পড়ল ধরা ভাষার মুস্কিলে।
কালিদাস বসু খুব করেছিলেন চেষ্টা
ফাঁসির বদলে দীপান্তর করে দিতে কেসটা।
আদেশ শুনে ক্ষুদিরাম স্মিত হাস্যে রয়
জজ ভাবে রায়ের অর্থ বোঝেনি নিশ্চয়।
ভয় করে কিনা যবে জিজ্ঞাসিত হয়,
ভয় কেন?কারে ভয়?ভয় করে ভয়।
এইরূপ দীপ্তবাণী যার কণ্ঠে হায়
ভয়েরে ধরায় ভয়। অমর ধরায়।
ফাঁসি শুধু নিল তার নশ্বর দেহ
সেদিন ঊনিশ'শ আট, আগষ্ট এগার।
ছয় হাজার আট শত ছাব্বিশ দিন
পরে,ক্ষুদি চলে গেল শুধে মাতৃঋণ।
আরো কত যেত পাওয়া সে থাকলে পরে
বোধনের কালে হায় যেতে হ'ল সরে।
অবিনাশী আত্মা, তারে কে নাশে ধরায়?
বীরপুত্র লাগি মাতা আছে প্রতীক্ষায়।
ক্ষুদিরাম বসু
মেদিনীপুরের দামাল ছেলে শহীদ ক্ষুদিরাম
সত্যেন বসুর মন্ত্র শিষ্য অভীর সন্তান।
একদিক থেকে বলাই চলে অনেক ভাগ্যবান
জীবন করে দান।
পেট্রিয়ট্ অফ্ পেট্রিয়টস্- গুরু সত্যেন বসু
দেশের জন্য দান করেছেন আপন জীবন অসু।
কিন্তু তাঁর নাম বা ক'জন বাঙ্গালী জানে
বাঙ্গালীর দুর্দিনে?
জাতীয়তাবাদের পিতামহ- রাজনারায়ণ বসু
সত্যেনেরই জ্যেষ্ঠতাত বঙ্গের বসু শ্রেষ্ঠ বসু
তাঁর নাম বা কয়জনেই রেখেছে আজ মনে
সৌভাগ্যবান তাই তোমারে করেই নিলাম মনে।
পটলচেরা পণ্ডিতেরা অদৃশ্য ইশারা পেয়ে
সন্ত্রাসী তোমায় ঘোষণা করে,যায়নি ছাড় পেয়ে।
রে রে করে উঠেছি সবাই- আম জনগণ
কলমাপড়া সেই পণ্ডিতেরা সন্ত্রস্ত তখন।
আলোর মালার মত যখন ফাটছে বাজীর ঘর
আশপাশের বাড়ীতে ফাট কেঁপে থরথর
বুদ্ধিবেচা বুদ্ধিজীবী থাকেই চুপ করে
এইসময়ে দামাল তোমায় ভীষণ মনে পড়ে।
ফাঁসি?সে তো নিয়েছে শুধু নশ্বর দেহ
ভয়কে ধরিয়েছ ভয় তুমি অহরহ।
সেই স্মৃতি চিরদিন রবে অমলিন
অমৃতের পুত্র হলে মরণবিহীন।
প্রাণ দিয়েছ প্রাণ পেয়েছ সহস্র প্রাণের কাজে
তবুও যেন বিরহ আছে লুকিয়ে মনের মাঝে।
আজও তেমন ঘোর অন্ধকার ভীত জনগণ
ক্ষুদিরাম- তোমাদের আজ ভীষণ প্রয়োজন।
নশ্বর এই দেহখানি থাকে না চিরদিন
অচ্ছেদ্য অদাহ্য আত্মা অমর অমলিন।
সেই আশ্বাসে ডাকি তোমায় আবার এসো ফিরে।
নন্দিত নন্দিত করো মাতৃভূমিটিরে।
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

1 thought on “মেদিনীকথার উৎসর্গ কবির কলমে অগ্নিশিশু।”
সত্যি অনবদ্য সৃষ্টি ছবি ও লেখা