
বরুণ বিশ্বাস
বরুণ বিশ্বাসের কথা মনে আছে ? না থাকারই কথা, অনেকেতো হয়তো ঠিক করে চেনেনি না .. না উনি কোন পর্দার হিরো নন ..আর বাস্তবের কথা বলতে গেলে , উত্তর চব্বিশ পরগনার “ধর্ষণ গ্রাম সুঁটিয়ার” নাম শুনেছেন ? মানে গ্রামটিতে এমন কোন বাড়ী ছিল না যাদের পরিবারের কেউ না কেউ ধর্ষিতা হননি .. সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালীর নেতৃত্বে কুড়ি পঁচিশ জনের একখানা দল নিয়মিতভাবে খাতা পেন নিয়ে বসে গণধর্ষনের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের লিস্ট বানাতো তারপর সেগুলো টাঙ্গিয়ে দেওয়া হোত আর সেই লিস্ট ধরেই চলতো একের পর এক গণধর্ষণ .. অথচ সবাই দাঁতে দাঁত চিপে সহ্য করতো কারন ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক বলে বলীয়ান লোকেদের বিরূদ্ধেও যে প্রতিবাদ করা সম্ভব এরকম ধারনা ছিলো তাদের কাছে অকল্পনীয় .. সময়টা ছিলো ২০০২ সালের ১ লা আগস্ট .. সুঁটিয়া বাজারে ডাক দেওয়া হলো প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদসভার। অনেকেই এসেছে, তবুও বক্তৃতা করার সাহস কেউ পাচ্ছে না। এগিয়ে এলেন এক যুবক, মাইকটা তুলে নিয়ে বললেন, “যদি এখনও মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা করতে না পারি, তা হলে আমরা সভ্য সমাজে থাকার যোগ্য নই। আমাদের যদি ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস না থাকে, তাহলে আমাদের তাদের থেকেও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত… ” সুঁটিয়াবাসীর মানুষের মেরুদন্ডে বিদ্যুৎ খেলে গেলো , মুসড়ে পড়া লোমকুপ গুলো এবার আস্তে আস্তে দৃঢ় হতে শুরু করলো .. পরের দিনই তৈরি হোল সুঁটিয়া গণধর্ষন প্রতিবাদী মঞ্চ আর তার নেতৃত্ব দিলো বছর তিরিশের ওই যুবকটি .. নাম বরুন বিশ্বাস , মায়ামাখা চোখ , মুখে অনাবিল হাসি , দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব আর পেশায় কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনের বাংলার শিক্ষক .. WBCS পরীক্ষায় সফল হওয়া সত্যেও শিক্ষকতা করতেন একটু সময় বেশি পাবেন বলে আর সেই সময় টুকুকে কাজে লাগিয়ে নিজের গ্রামের জন্যে , সমাজের জন্যে , মানুষের জন্যে কিছু করবেন বলে .. প্রচার বিমুখ মানুষটি কাজে বিশ্বাস করতেন, সেবায় বিশ্বাস করতেন, মমত্ব স্নেহে বিশ্বাস করতেন, আত্ম প্রচারে নয় .. অন্ধকারাচ্ছন্ন সুঁটিয়াবাসী নতুন করে নিশ্বাস নিতে শিখলো বরুণ আলোয় , মেরুদন্ড সোজা করে প্রতিবাদের ভাষা পেলো .. এগিয়ে চললো আন্দোলন .. রাতে বরুন দার মোটর বাইকের আওয়াজ শুনে বাড়ীর মহিলারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতো .. প্রতিবাদের চাপে ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়ছিলো চুনোপুঁটিরা , বেরিয়ে আসছিলো বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নাম .. অতঃপর .. দিনটা ছিলো ২০১২ সালের ৫ ই জুলাই , পেছন থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি চললো, লুটিয়ে পড়লো দেহ , অন্ধকার নেমে এলো .. ১৯৭২ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর মাসে জন্মানো সেই সাহসী যোদ্ধার জীবনাবসান ঘটলো, প্রায় তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার লোক স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন করেছিলো ওনার শেষ যাত্রায় .. প্রতিবাদীরা মরে , মরতে হয় কিন্তু প্রতিবাদ বেঁচে থাকে , বাঁচিয়ে রাখতে হয় .. তাই আমি , আমরা কিংবা আপনারা কি কোনভাবেই পারিনা বরুণ বিশ্বাসদের মতো লোকেদের বাঁচিয়ে রাখতে ? খাতায় পেনে হাতে এঁকে জানাই বিনম্র চিত্র শ্রদ্ধার্ঘ্য।
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

1 thought on “বরুণ বিশ্বাস”
অসম্ভব সুন্দর হয়েছে এমন বেক্তিত্বকে নিয়ে লেখার জন্যে।
এইরকম আরো লেখা চাই।