
ত্যাগ
সবুজ সকালের সুরম্য শিশিরের ডগা গুলিকে অনিচ্ছুক আদর করতে গিয়ে মিনার শরীর শিরশির করে। কী এক অজানা স্রোত প্রবাহিত হয় তার দেহে। বুকটা হঠাৎই যেন ঘোষণা করে সে বড্ড একলা।
আর তখনি পাশ দিয়ে তপন যেতে যেতে বলে ওঠে-"কি রে তোর ধান পাকেনি?"।
মিনা ভাবতে শুরু করে যে ধান গর্ভে হয়েছে বিনষ্ট সে তো 'আগড়া' সে কারূর কোনো কাজে আসে না।
উত্তর না পেয়ে তপন আচমকাই দেয় হাতে টান বলে-"কি রে কি ভাবছিস?"
"কই কিছু না তো"।
তপন পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বাতাসে ভেসে যায় মিনার একরাশ দীর্ঘশ্বাস।
ছোট বোনের স্বামী তপন। হলই বা সে মিনার পূর্ব প্রেমিক; তবুও রাস্তাঘাটে পাড়া গাঁয়ে গায়ে হাত কি মানা যায়!
তবু মিনার মন বলে আরও একটু হাত বাড়ালে ক্ষতি কি?
এখনও সে ভেবে পায়না কেন এমন শিরশির করে শরীর। সে যে বড়; বড় বোন, সংসারে সবার জন্যে সবকিছু ত্যাগ করাই তার কর্তব্য।
প্রখর জৈষ্ঠ্যের গরমে পাকা আমের লোভে কখন দুজনের মনটা হয়েছিল এদিক-ওদিক সেসময় ধরা যায় না। বোঝা যেদিন গেল সে তো শ্রাবনের সন্ধ্যা।
রোমশ বুকে মাথা রেখে মিনা করেছিল চারা রোপণের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতের কল্পনা। পাশাপাশি একত্রে ক্লাবে মনসা পূজোয় অঞ্জলি দেওয়া; লালাপেড়ে সাদা শাড়িতে মিনা যেন তপনের প্রাণ ভোমরা।
আরতির সন্ধ্যার পর দুজনেই খেয়েছিল প্রসাদ তৃপ্তিতে। বসন্তবিলাসী বাতাসে দুজনের আগামীর সানাই বাজার পূর্বেই সে বছর এসেছিল চৈত্রের "কালবৈশাখী"।
মাঠের ধান রইল মাঠে। যদিও গর্ভাবস্থায় ধানের বীজকে খানিকটা নষ্ট করেছিল অবাঞ্ছিত পোকা।
অন্তিমে মিনাইতো ঠিক করল বোনটা তার খুবই সুন্দরী না হোক সৌভাগ্যবতী অবশ্যই। আর তপন ছাড়া অন্য কে বা আছে এমন বিশ্বস্ত।
আর মিনা! মিনা তো বড়! বাবা মা আর মাঠের ধানের দায়িত্বে। ধান তো ধানই জমি তার রাখে কি খবর?
তবু মিনা ভাবে পোড়া শরীরের শিরশিরানি টা যায় না কেন।
ভাবনায় ছেদ পড়ে। কোকিলের কুহুরবে।
হঠাৎই মিনা কোকিল কে করে তিরস্কার-"দূর!দূর!পোড়ামুখি এত চেঁচাস কেন?!"
এবার সে নিজের ওপর রাগ করে জোরে পা চালায়,কি এতসব ভাবছে সে। দুর থেকে দেখতে পায় তার জমির আধপাকা ধানের মাথা দোলানো হাসি।
"ধান এবার কবে পাকবি রে?"
ধান উত্তর দেয় ধানের সুরে। মুচকি হেসে মিনা মুখ ফেরায়। ধানেই তার শান্তি!ধানেই পায় সে তৃপ্তি।।

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

1 thought on “👩🏻🌾 ত্যাগ 🌾”
কৃষকের এই রূপ কষ্টের কাহিনী গুলো এই সমাজে কেমন ঢাকা পড়ে গেছে।