কালবেলায় রবি কবি

আজ ২৫ শে বৈশাখ,কবি গুরু রবীন্দ্রাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মদিন।এই বিশ্ব অতিমারি আবহে  অনেকটা ফিকে রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান।তবুও বাঙালির জীবনে,মননে,হৃদয়ে কবি চিরকালই উজ্জ্বল।আজ থেকে একশো বছর আগে যখন কলেরা,প্লেগ,ম্যালেরিয়া  প্রভৃতিতে বাংলা বিপর্যস্ত তখন জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কবির বিভিন্ন লেখা,পদক্ষেপ ও কর্মসূচি আজও এই মহামারীর আবহে অনুসরণ ,অনুকরণ ও আলোচনা অত্যন্ত  প্রাসঙ্গিক।

১৮৯৮ থেকে ১৯০৮ সাল।মহানগরী কলকাতায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো প্লেগ। আক্রান্ত হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে মৃত্যু।ভয়ে,চিকিৎসার অভাবে মানুষজন শহর ছাড়ছে ।কবির সুহৃদ বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু ও প্লেগের অনুগ্রহে পলাতক।কলকাতা যেন পরিত্যক্ত নগরী।চলছে মৃত্যুর মিছিল।চারদিকে এই মৃত্যু উপত্যকায় কবি নিজেকে নিয়োজিত করলেন আর্তসেবায়।আর্তের ভগিনী ভগিনী নিবেদিতা ও অবনীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন প্লেগ হাসপাতাল।নিয়োগ করলেন ডাক্তার ও নার্স।নজরদারি  ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে  পাড়ায় পাড়ায় পর্যবেক্ষণে যান।ঠাকুরবাড়ির সবাই যখন প্লেগ নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ,ঠিক সেই সময় অবন ঠাকুরের দশ বছরের মেয়ে মারণ রোগে মারা যায়।গোটা ঠাকুর পরিবারই সেই মৃত্যু যন্ত্রণা কাছ থেকে দেখেছিল।

শুধু প্লেগ নয়,কলেরা মতো মহামারীতে কবির ভূমিকা ছিল সক্রিয়।এই মহামিরিতে কবি তার কনিষ্ঠ পুত্র শমিন্দ্রনাথকে হারান ।পুত্র শোকের ভাষা রূপান্তরিত হয় বলিষ্ঠ লেখনী শক্তিতে।তার কবিতা( যথা পুরাতন ভৃত্য), প্রবন্ধ( যথা ওলাওঠা), উপন্যাস (যথা চতুরঙ্গ) প্রভৃতির মধ্যে এই মহামারীর চালচিত্র ফুটে উঠেছে।

১৯১১ সালে বাংলায় কলেরা মারাত্মক আকারের পর,কয়েক বছর বাদে আসে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী।কবি অবতীর্ন হন কবিরাজের ভূমিকায়।শান্তি নিকেতনের আবাসিক কে নিজের হাতে তৈরি 'পঞ্চতিক্ত 'পাচন ( নিম,গুলঞচ,বাসক, পলতা,কন্টিকাটির  মিশ্রণ )সেবন করে সুস্থ করেছিলেন।

১৯২১সালে শান্তি নিকেতনের পার্শ্ববর্তী ম্যালেরিয়া গ্রস্থ জনপদে পথে নামলেন স্বয়ং কবি।ধারাবাহিক প্রচেষ্টায়,ঔষধ, চিকিৎসকদিয়ে গড়ে তুললেন পল্লীতে পল্লীতে সেবাকেন্দ্র,পরবর্তীকালে কবির  এই  সেবামূলক কাজ ও  মহতী চিন্তাভাবনা সরকারের কাছে মডেল রূপে গৃহীত হয়।

'দেশনায়ক' প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন - 'ম্যালেরিয়া ,প্লেগ,দুর্ভিক্ষ কেবল উপলক্ষ মাত্র,তাহারা বাহ্য লক্ষণ মাত্র - মূল ব্যাধি দেশের মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে। - - - ' আজ কবি গুরুর জন্মদিনে আমরা যদি এই মূল ব্যাধিকে খুঁজতে পারি,চিহ্নিত করতে পারি,সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি তবেই মানব জাতির মঙ্গল।

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈