মূঢ়

দয়াল নামে গরিব মানুষ
       স্ত্রী সন্তান সহ,
দুবেলা আহার জোটাতে 
       খাটতো অহরহ |

নুন আনতে পান্তা ফুরায়
       এমনি সংসার,
জীবনটাকে যাপন করা
       সইছে না যে আর |

কোন কোন দিন অনিশ্চিত 
       দুবেলা ভাত রুটি,
তবুও লোকের কষ্ট দেখলে
       জল আসে চোখ ফাটি |

জীবনে এত কষ্ট সত্ত্বেও
       এক ছিল তার শক্তি,
দেব দেবীদের প্রতি ছিল
       মনে অগাধ ভক্তি |

কষ্ট সইতে আর না পেরে
        চলল একদিন বনে,
সেথায় নারায়ন দেখা দিলেন
        তার ভক্তির টানে |

একটি শঙ্খ দিয়ে দেবতা বলেন
         সামনে রেখে এটি,
যা চাইবে মূহুর্তে পাবে
         তবে শর্ত আছে দুটি |

একমাসে একবার করে
        তিন মাসে তিন বার,
যা চাইবে তাই পাবে
        পরে পাইবে না আর |

দৈবশঙ্খ হাতে দয়াল
       মহানন্দে চলে,
ঘরে ফিরে ভার্যারে তার
        কথাগুলো সব বলে |

হতদরিদ্র কত দিন
       ভালো খাবার খায়নি,
মনের মাঝে সাধ থাকলেও
        অর্থাভাবে পায়নি |

যেই না চাওয়া খাওয়ার থালি
         সামনে এসে পড়ে,
ঠিক তখনি এক ভুখা লোক
         হঠাৎ এল উড়ে |

ক্ষুধায় কাতর লোকটি এসে
        চেয়ে বসল খাবার,
অতিথিরে সব দিয়ে নিজেরা
         উপোসে থাকলো আবার |

আহারান্তে গৃহস্থের
       মঙ্গল কামনা করে,
ফিরে যেতে যেতে লোকটি হঠাৎ 
       কোথাও গেল সরে |

তিনটি বরের একটি গেল 
      ক্ষুধার্ত অতিথির পেটে,
আর একটি বর পেতে গৃহস্থের
       পুরো একমাস কাটে |

ইতোমধ্যে ঐ অঞ্চল
       বন্যা প্লাবিত হ'ল,
জলের তোড়ে বহু মানুষ
       ঘরদোর হারাল |

ধার্য দিনে লোকটি চাহে
       তিনতলা এক বাড়ি,
প্রাসাদসম বাড়ি এসে নিল
        সবার নজর কাড়ি |

তখনি হঠাৎ হৈ হৈ করে
      শত শত লোক আসি,
করজোড়ে বলে আশ্রয় দাও,
        আমরা বানভাসি |

এত গৃহহীন নরনারী দেখে
        মন হ'ল বিগলিত,
কহিল সবারে তোমাদেরি গৃহ
       থাকো গিয়ে খুশি মত |

জনতারে দিয়ে অট্টালিকা
       পরিবার যায় ফিরে,
দিনাতিপাত করে আগের মত
       পুরাতন ভাঙ্গা কুটিরে |

দৈব বরের রয়েছে কেবল
        একটি মাত্র বাকি,
ভুল করলে সারাজীবন
        পেতে হ'বে ফাঁকি |

অনেক ভেবে এবার দয়াল
      শক্ত করিল মন,
যেভাবেই হোক বাকি বরটায়
       গড়ে নেবে সে জীবন |

অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের
       কষ্ট আর না হয়,
এমন বর চাওয়ার জন্য
        গিন্নি দয়ালে কয় |

নির্দিষ্ট দিনে স্ত্রী পুত্রসহ
        শঙ্খখানি লয়ে,
বর চাইবে এমন সময়ে
        কারা আসে পায়ে পায়ে |

তিন শিশু লয়ে অচেনা এক নারী
        ঘর্মাক্ত পথক্লান্ত,
আসি করজোড়ে দয়ালেরে কহে
        সবিশেষ বৃত‍্যান্ত |

স্ত্রীলোকটি কহে বাবা মা তাদের
       গেছে যে অমৃতলোকে,
দানবীর তুমি এসেছি তাই
        শুনে লোক মুখে মুখে |

মূহুর্তে দয়াল ভুলে গেল তার
       নিদারুন দুঃখ কষ্ট,
বিস্মৃত হয়ে নিজ পরিবার
       হইল লক্ষ্যভ্রষ্ট |

শঙ্খখানি সুমুখে রেখে
       বিধাতারে কহে দয়াল,
আজীবন এই অনাথ দের
        রাখো প্রভু তুমি খেয়াল |

দয়ালের কথা ফুরানো মাত্র
       শঙ্খটি উড়ল আকাশে,
শূন্য দৃিষ্টিতে চেয়ে থাকলো
       স্ত্রীপুত্র সকাশে |

যে নিজে দরিদ্র, দানে উন্মুখ
       পণ্ডিতেরা বলেন মূঢ়,
মূল্যহীন কি এই মহৎ ত্যাগ
        নাহি কি তত্ত্ব গুঢ় ?

বিদ্যুৎ বেগে দয়ালের কথা
       ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে,
রাজপ্রাসাদে রাজার কানে
       খবর যায় অবশেষে |

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে
       পুরো রাজদরবার,
রাজার আদেশে পৌঁছে সেথায়
       দয়ালের পরিবার |

মহারাজ কহে শুনহ দয়াল
      বড় ধার্মিক তুমি,
তোমার মহান ত্যাগে অতীব
      খুশি হয়েছি আমি |

অসাধ্য সাধন করেছ তুমি
      যা সম্ভব নয় কারো পক্ষে,
অাজি হতে তোমার স্থান হ'ল
     রাজপ্রাসাদের কক্ষে |

সারাদেশে তোমার কীর্তিতে 
      প্রজাগন চমৎকৃত,
তোমার সান্নিধ্যে আজি হ'তে হবে
      রাজসভা অলঙ্কৃত |

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

•