পাগলের কথা

মুক্ত স্টেশনে পাগলটা 
চিৎকার করে বলছে ----
এখানে নারী দিবস আছে, 
      মাতৃ দিবস আছে , 
তবু হররোজ কেন জীবিত শরীরে 
মৃত মনের লাশ বহন করে চলছে নারী..?
যার হৃদি-ওম'এ নিরন্তর ঝরছে ---
রক্তে রাঙা শুকনো আকাঙ্খা....! 
যার বেহাগের স্বরলিপিতে তোমরা
পূর্ণিমার খোল করতাল বাজাও
যার জীবনটাকে বানিয়েছো----
হলদে পাতার পোকায় কাটা দলিল, 
সে আর কেউ নয়, 
    যাকে তোমরা নারী বলো । 

যদি ত্যাগের অন্য নাম নারী
যদি ভোগের অন্য নাম নারী
যদি সেবার জন্য নারী কিংবা
সহ্যের জন্য নারী ভেবেই থাকো , 

তবে স্নেহের জন্য নারী 
  মমতার জন্য নারী 
   মায়ের জন্য নারীকে ভাবতে
তোমার লজ্জা করে না পুরুষ...? 

পুরুষ তান্ত্রিকের তন্ত্র সাধনায়
ঘৃতাহুতিতে জ্বলছে নারীর শরীর
চড়পড়িয়ে মুড়ি মুড়কির মতো ফুটিয়ে
তোমরা চিবাচ্ছো কৃত্রিম ভালোবাসা । 
অসংখ্য তাপহীন নিরুত্তর প্রেমে । 

পার্কের মোড়ে দাঁড়িয়ে পাগলটি বলছে...
একটি মেয়ে-নারী উন্মুক্ত বাতাসে
উন্মত্ত ভোকাট্টা ঘুড়ি হলে -----
প্রজাপতির ডানার মতো বসন্ত মেখে
শিকার ধরে পুরুষ-ছেলে । 

'তোমাকে ভালবাসি' চুপকথারা
বুকের প্রতিটি কোণায় জমাট বাঁধলে
নারী হয়ে যায় বিছানা 
   পুরুষ হয়ে যায় রাত্রিবাস । 
হামাগুড়ি দিয়ে সটান দাঁড়ায়
হায়নার দাঁতে মুখোশ পরা প্রেম । 
ঠিক তখনই বোধহয় শ্রী ভগবান
আড়াল হতে দেখে যান নীরবে
কীভাবে আঁকা হয়ে যায় বোবা কান্নায়
নারীর বুকে এক দিঘল রাত ...! 

ফিসফিসিয়ে পাগলটা তখন বলে---
ওদের স্বার্থের পাকস্থলীটাও 
হজম করতে পারে বেশ---
গোটা কতক ভাঙা চোরা শিরদাঁড়া । 

পাগলটা নারী দিবসের মঞ্চের পাশে বলছে--
যদি বলো, নারী দিবস , মাতৃ দিবস
নারীর দিবস, মা'য়ের দিবস, 
তবে আমি ফলবান তরুবর হবো, 
যদি বলো, নারীর জন্য দিবস , 
মা'য়ের নিমিত্ত পালিত দিবস
তবে আমি, কূল ভাঙ্গা নীলনদ । 

আসলে তোমরা বড্ড ভুল করো পুরুষ
একটি নারী দিবস, একটি মাতৃ দিবস 
তা পালিত হবে কি হবে না 
তা ঠিক করবে নারী-মা, মা-নারী । 
 
পুরুষ তুমি যদি নারীর পদবী রমণী ভাবো
হাজারো রং-তুলি নিলেও
মায়ের মুখ আঁকতে গিয়ে এঁকে ফেলবে
একটা রক্তাক্ত ভারতবর্ষ । 

কারণ, ঠিক কতটা 
দুঃখ-বিষাদ-বঞ্চনা-যন্ত্রণা মিলেমিশে 
মায়ের অশ্রু হয় তার হিসাব জানো না। 

পাগলটা খোলা আকাশের নীচে বলছে--
এই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে 
নারী ছাড়া কতটা এগিয়েছো পুরুষ..? 
অথচ নিজের সন্তানকে দুফাঁক করে
দিয়েছো তার ছেলেবেলা মেয়েবেলা । 
চোখে মুখে গ্রীষ্ম মেখে বলেছো---
   এ্যায় মেয়েটা চুপ্ কর্
এই মাছের মাথাটা তোর নয়
তোর দাদা এলে ওটা খাবে , 
জানিসনা, তাকে লেখাপড়া করে 
বড়ো মানুষ হতে হবে....!!!

কখনো যৌন আগুনে জ্বালিয়ে 
বার বণিতা উপাধি দিয়ে বলেছো---
    এ্যায় মেয়েটা চুপ্ কর্ 
চিৎকার করে কাঁদিসনে আর
চোখ মুছতে বলছি তোকে, 
জানিস না, কথাটা বেশি জানাজানি হলে 
নানান কথা বলবে লোকে । 

পাগলটা বাড়ির উঠোনে এসে বলছে---
ঐ বাউণ্ডুলে বাউল সূর্যটা দেখেছে
পুরুষ তুমি নানান বেশে যুগ যুগ ধ'রে
নারীকে ওলোট পালোট ভেজেছ
প্রকাশ্য গণসভায় কখনও
দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণে দুঃশাসন , 
প্রজা গণের সতীত্ব বিচারে কখনও
সীতার অগ্নি পরীক্ষায় রামচন্দ্র , 
পুরুষ তান্ত্রিক চরিত্র হীনতায় কখনও
বধূ নির্যাতনে ফাঁসুড়ে স্বামী , 
আবার কখনওবা গণ ধর্ষণে
আবু রসিদ, টাবলু ঘোষ, ভণ্ড সাধু, 
আর এখন ধর্ষিতা মৃতার সহমর্মিতায়
তুমি মাননীয় সতীনাথ সাহায্যকারী । 

গোধূলী তাড়িয়ে নীরবে যখন
আকাশ হতে বেমালুম রাত্রি নামে, 
জোছনা মেখে ঝিঁঝি রা গান ধরে---

বন্ধ না-হয় করলো সে মুখ 
মুছলো চোখের জল , 
মুছবে কি তার যত অপবাদ
বলনারে পুরুষ বল...!!!

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈

•