★ শিক্ষা ★
(করোনা প্রসঙ্গে — ছোট গল্প)
রাত এগারোটা বাজে। তপন বাবু আজ যথেষ্ট রেগে আছেন ছেলের ওপর। কিছুক্ষণ আগে গিন্নির সাথে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। রাতের খাওয়ার শেষ করেও শুতে যাননি। চেয়ারে বসে বসে খবরের কাগজটা দেখছেন , করোনা ভাইরাস কিভাবে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, দেখছেন দিন দুনিয়ার খবর।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ । অনিমেষের মা ছুটে গেলেন দরজা খুলতে। অনিমেষ ঢুকলো। তপন বাবু সটাং দাঁড়িয়ে ছেলের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললেন —
—– দাঁড়াও , এখন ক’টা বাজে….? এতক্ষণ কোথায় ছিলে…?
—— ঐ চা দোকানে রীতেশ, বিপিন, অমলদা এদের সঙ্গে কথা বলছিলাম।
——- কেন, এতরাত পর্যন্ত কী কথা থাকতে পারে শুনি..? বেশ তো নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছ এদিক ওদিক। তোমার কি কোনও ভয়ডর বলে পদার্থ নেই..? আর শিক্ষা দীক্ষার তো মাথা খেয়েই বসে আছ ।
—— এতে শিক্ষা দীক্ষার কি আছে..?
—— শিক্ষা দীক্ষার কি আছে , আরও বড়ো বড়ো কথা হচ্ছে..? বলি দিন-দুনিয়ার কোন খবর রাখো..? করোনা এখন গোষ্ঠী সংক্রমণে পা দিয়েছে, তাও তুমি মাস্ক ছাড়াই দুনিয়া ছুটে বেড়াচ্ছো, তোমার বউ-বাচ্চা, আর এই দু’জন বয়স্ক মানুষের কথা একটু ভাবো…? যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে , এসব দেখে শুনে তোমার কোনও ভয়ডর হয়না..? আর এই মাস্ক, স্যানিটাইজার গুলো কি বাড়িতে ফেলে রাখার জন্য কেনা হয়েছিল…? সময় থাকতে সচেতন না হওয়ায় সারা দেশে তথা বিশ্বে কি হচ্ছে শুনতে তো পাচ্ছো নাকি…? ফেস বুকের কোন এক কবির একটা আধুনিক কবিতার কথা মনে পড়ছে—

” সময় মতো সচেতন না হলে
অঘটন ঘটে সারা জীবন ধ’রে ,
ভুলের মাশুল গুণতে গুণতে শেষে
মৃত্যু বসায় থাবা জীবন পরে । “
কথা গুলো কানে ঢুকলো নাকি…? আর হ্যাঁ, কাল থেকে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে কোথাও বেরোবে না। মাস্ক ছাড়াতো একদমই না। যাও সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-পা ধুয়ে খেতে বসো ।
——- ওসব আমার লাগবে না ।
—— কী…! তবে দূর হয়ে যাও আমার ঘর থেকে । আমাদের একটু অন্তত সুস্থ ভাবে শান্তিতে বাঁচতে দাও । আমরা থাকবো নিয়ম মেনে, আর উনি সব লণ্ডভণ্ড করবেন । নিজে তো মরবেই আর আমাদেরও মারবে ।
কথায় কথায় রাত বাড়ছে , তপন বাবুকে ঠেলে অনিমেষের মা নিয়ে গেলেন শোবার ঘরে । ওখানে উনি বললেন ——
—– দেখো, ছেলের মনের অবস্থা ভালো নেই, দীর্ঘ দিন ঘরে বসে আছে তো, তাই কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে, বৌমার সাথে অহরহ ঝগড়া করে। কথাও তেমন বলতে চায়না । তুমি চুপচাপ ঘুমাওতো , যখন যা হবে তখন দেখা যাবে ।
অনিমেষও নিশ্চিন্তে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লো ।
বাইরে কারা যেন কথা বলছে । তাদের মধ্যে একজন হাঁক দিল—-
—– তপন বাবু বাড়িতে আছেন…?
তপন বাবু দরজা খুলে বাইরে এলেন। দেখলেন, সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ, আশা কর্মী এবং পেসেন্ট ট্রান্সপোর্ট গাড়ির আপাদমস্তক পি পি মোড়কে আঁটা একজন ড্রাইভার । পুলিশ অফিসার বললেন—–
— আপনি তপন হালদার..?
—- হ্যাঁ, কেন কি হয়েছে অফিসার…?
—- আপনি যে , দিন কয়েক আগে আপনার লালারস দিয়েছিলেন,করোনা টেস্টের জন্য, তার রিপোর্ট পজিটিভ এসছে । এই নিন।
বলেই পুলিশ অফিসার ড্রাইভারকে ইশারা করে কি যেন বলে দিলেন । ড্রাইভার গাড়ি থেকে একটা পি পি’র প্যাকেট বের করে ধরিয়ে দিল তপন বাবুর হাতে, আর বললো —-
—— তাড়াতাড়ি এগুলো পরে নিন ।
সবাই লক্ষ্য করছে তপন বাবুর যেন বেশ শ্বাস কষ্ট চলছে । পুলিশ অফিসার বাড়ির সকলের উদ্দেশ্যে বললেন——
—— দেখুন, আপনারা কেউই বাড়ির বাইরে যাবেননা , একেবারে হোম কোয়ারেন্টাইন’এ থাকুন। এরপর আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা আসবে আপনাদের সকলকেই নিয়ে যাওয়া হবে দূরের কোনও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ।
হেলথ্ প্রোটেক্টিভ্ পিপি’র প্যাকেট খুলে আস্তে আস্তে একের পর এক বের করছেন তপনবাবু , কার ওপর কি পরতে হবে দূরে দাঁড়িয়ে এক স্বাস্থ্য কর্মী বলে বলে দিচ্ছেন। সম্পূর্ণ ড্রেসড্ হয়ে ওঠার পর তপন বাবু, করুণ চোখে একবার ছেলে অনিমেষের দিকে ফিরে তাকালেন। ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন । যেন একটা পলিথিন মোড়া প্যাকেট চলেছে । দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে ছেলে অনিমেষ।
হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠলো অনিমেষ । চিৎকার করে বলে উঠলো——
—— বাবা………!!! তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী বাবা, কারণ, আমি তোমার কোন কথাই শুনিনি । আর কোন দিন তোমার অবাধ্য হবোনা বাবা। বাবা বাবা বা বা…………….!!!
পাশে স্ত্রী মধুরিমা ধড়মড়িয়ে ঘুম ভেঙে উঠে বসে জিজ্ঞাসা করে উঠলো—–
—– কি হয়েছে , কী হয়েছে তোমার , এমন চিৎকার করছো কেন তুমি ….?
অনিমেষ ও ধড়ফড়িয়ে উঠে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে কি যেন বললো , তারপর এক লাফে বিছানা থেকে নেমেই,
—- বাবা – বাবা – বাবা….. বলে ডাকতে ডাকতে পাশের রুমে শুয়ে থাকা বাবার বিছানার দিকেই ছুটলো ।

আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য, আপনার লেখা ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বা আপনার আঁকা ছবি।
আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে শর্তসাপেক্ষে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করব, আপনাদের প্রিয় এই ওয়েবসাইটে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈