
………ভোরের স্বপ্ন………..
ভোর ৫টা বেজে ৩০ মিনিট। টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। পাখির কিচিরমিচির কলতান ভোরের সৌন্দর্য ময় রূপকে স্নিগ্ধতার আলোকে রাঙিয়ে দিচ্ছে। খাটের ওপর শুয়ে সম্পা। সময়টা ঠিক ১০ বছর আগে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সম্পা শ্বশুরবাড়ি আসে স্বামীর হাত ধরে। তখনও সে জানতো না সেটাই হবে তার শেষ হাত ধরা। ফুলসজ্জার রাতে কর্তব্যরত পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর স্বামীকে একটা জরুরী ফোন আসতে ছুটে যেতে হয়। তখন রাত ২টা। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আলোটা নিভিয়ে দিল সম্পা। আলোটা নিভিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তার জীবনের সমস্ত আলো অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। ভোর ৪টা। একটা ফোন কল। সব শেষ। কয়েকজন জেল পালানো কয়েদি মিলে খুন করেছে এস. আই. প্রতীক ভট্টাচার্য কে। বুকটা ধড়াস করে উঠলো সম্পার। শ্বশুরবাড়ির সবাই মিলে অপোয়া বউ পরিচয় দিয়ে ঘরছাড়া করলো মেয়েটাকে। বাপের বাড়িতে ও কয়েকদিন থেকে তিস্টাতে পারছিলনা সে। প্রতিবেশীদের কথায় তার কর্ণ গহ্বর এর পর্দা পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছিল। সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছাড়ে সে। একা সে কোথায় যাবে। কিছু ভেবেই বড়ো শহরে গেলো সে। কয়েকটা বাড়িতে সে ঝিয়ের কাজ করতো। বেশ চলছিল নিজের সংসারটা। একদিন বেরিয়েছে কাজে যাবে বলে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বড়লোক বাবার একমাত্র বখাটে সন্তানের ল্যান্ড রোভার টা একদম পিছনে এসে মারলো সম্পার। চমকে চিৎকার করে উঠলো। পাশে দেখলো তার ৭বছরের মেয়ে রিনি ঘুমাচ্ছে। তবে কি তাই এটা শুধুই একটা দুঃস্বপ্ন। বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। ভয় পেলো সে। হাতের কাছে জল রাখা গ্লাসটা তুলে নিলো। জলটা ঢোক গিলতে পারলো না। ফোন এলো। রিসিভারটা কানে দিতেই — এস. আই. প্রতীক ভট্টাচার্য কে কেউ রাস্তায় মেরে ফেলে গেছে। তবেকি ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো। হাড় হিম হয়ে গেলো সম্পার। এবার তার ঘরছাড়া হবার পালা। ৭ বছরের মেয়ে কে নিয়ে কোথায় যাবে সে। এসব ভাবতে ভাবতে কপালে আলতো চুম্বনে দ্বিতীয় বারের মত ঘুমটা ভেঙে গেলো সম্পার। সামনে দেখলো প্রতীক আর রিনি তার জন্য বেড টি এনেছে। চোখে জল এসে গেল সম্পার। দুজনকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো সে।
সত্যিই কি তাই ; স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন ; এও সম্ভব ; তবে বড়ই নিষ্ঠুর।
