
দ্বিশতবর্ষ আয়ুষ্মান ভবঃ
পাশের গ্রামের হলধরের
গুনের নাইকো শেষ,
সমাজ সেবক, পরোপকারী
নামডাক আছে বেশ |
বছর তিরিশের যুবক বটে
সদ্য বিবাহিত,
মা ভাই বোন বাবা কাকাতে
পরিবার আনন্দিত |
ধীরে ধীরে চার সন্তানের
পিতা হল হলধর,
পরিবারের হাসিখুশীতে
গম গম করে ঘর |
হঠাৎ করে গ্রামের মাঝে
দেখা দিল এক সাধু,
বটের তলায় দিন-রাত বসে
নাম গান করে শুধু l
মনষ্কামনা লয়ে লোকজন
ভিড় করে দিবারাত্র,
তথাস্তু বলে সবারে ফিরায়
বিরক্তি নাই কিছুমাত্র |
দীর্ঘায়ু চাহি হলধর কহে
প্রণাম চরণে তব,
সাধু বর দেয় দুই শত বর্ষ
আয়ুষ্মান ভবঃ |
দিন মাস বছর কেটে কেটে
হলধরের এখন আশি,
ইতোমধ্যে পরলোকে গেছে
মাতাপিতা মেসো মাসি |
পার হয়েছে জীবনের কত
বিষাদ শোক হর্ষ,
হলধরের বয়স এখন
পূর্ণ শত বর্ষ |
যমরাজ খুলেছে আয়ুর বাক্স
হলধরের জন্য,
এদিকে ছেলেমেয়েরাই বুড়ো হয়ে
প্রায় মরণাপন্ন |
চনমনে হলধরের এখন
বয়স একশ কুড়ি,
স্ত্রী সন্তানরা পরপারে
নাতি-নাতনীরাই বুড়ো বুড়ি |
হলধর এবার বুঝেছে বটে
মিথ্যে বলেনি সাধু ,
আয়ুষ্মান ভবঃ কথাতে তার
নিশ্চয় ছিল যাদু |
নাই নাই করে হলধর বুড়োর
একশ চল্লিশ বয়স,
একটুও কমেনি মনের উদ্যম
কর্মশক্তি ও সাহস |
এত দিনে সব পাল্টে গেছে
যানবাহন রাস্তাঘাট,
পাল্টে গেছে শিক্ষা দীক্ষা
জিনিসপত্র বাজারহাট |
এখানে ওখানে সম্বর্ধনা পায়
সবচেয়ে প্রবীন বলে,
ঐ আনন্দে হলধরের
সময়টা যায় চলে |
ওষুধ কোম্পানী প্রচার করে
কমবে অম্বল পিত্ত বায়ু ,
সেবন করলে তাদের ওষুধ
পাবে হলধরের আয়ু |
একদিন তার খেয়াল হল
ঘুরবে কুটুম বাড়ি,
যেই না ভাবা তল্পিতল্পা
বাঁধে তাড়াতাড়ি |
মেয়ের বাড়ি, মামার বাড়ি
যেখানেতেই যায়,
অপরিচিতের মত সবাই
ফ্যাল ফ্যাল করে চায় |
নাতি-নাতনীর নাতি-নাতনীরা
চারদিকে ছেয়ে গেছে,
ভাবছে তারা এ কোন বুড়ো
আজও বেঁচে আছে |
দীর্ঘজীবী এ বুড়োর লাগি
নেই কারো মাথাব্যাথা,
সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে
বলে না দুদণ্ড কথা |
বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন
যত ছিল আগে পরে,
এ পৃথিবীতে কেউ নেই তার
সবাই গিয়েছে মরে |
হারিয়ে গেছে চেনা মুখ সব
আর যায় না দেখা,
এ পৃথিবীতে একদম সে
হয়ে গেছে বড় একা |
বাঁচার কোন ইচ্ছে নেই আর
চায় যেতে সে মরে,
মুত্যুটাও তার আটকে গেছে
ঐ সন্ন্যাসীর বরে |
মরতে হলেও বাঁচতে হবে
আরও পঞ্চাশ বছর,
সাধুর আশীষ মিথ্যে যে
হয় না সচরাচর |
শেষে হলধর সব মায়া ছেড়ে
চলে যায় জঙ্গলে,
মৃত্যু যদি সেথা পাওয়া যায়
বিধাতার মঙ্গলে |
