জানিনা

আসলে প্রকৃত প্রেমে সুখ দুঃখ থাকেনা
প্রেমের ডুব সাঁতারে ধুয়ে যায় সুখ ,
সুখ প্রকট হলে, হারিয়ে যায় প্রেম ।

যখন প্রেমের অকাল মৃত্যু ঘটে,
ঘাড় বেঁকিয়ে রাতের আকাশ দেখায় --- 
জীবন সারণীর অযাচিত মরা কালপুরুষ ।
বুকের ভেতর নির্ঘুম শুয়ে থাকে একটা
অনন্ত প্রেমের নিখাদ অবয়ব,
প্রেমের মমি………. ।

আসলে কারোর কিছু ভালো লাগায়
বোধহয় জন্ম নেয় ভালোবাসা আর
ভালোবাসা পক্ক হলে রঙ নেয় প্রেম ।

প্রকৃত ভালোবাসা জানতে গিয়ে
তোমায় প্রশ্ন করেছিলাম সেদিন---
সত্যি তুমি কি ভালোবাসো আমায়….?
তুমি বলেছিলে --- " জানিনা " ।
কলেজ ক্যান্টিন হতে চকোলেট তোমায়
দিয়েছিলাম, তুমি অর্ধেকটা কেটে
ধরিয়ে ছিলে আমার হাতে ।
আমি তার স্বাদ নিয়ে বলেছিলাম ,
আমাদের ভালোবাসা এমনই মিষ্টি তাইনা..?
তুমি বলে ছিলে --- " জানিনা " ।

তোমার ঐ 'জানিনা'র ভেতরই লুকিয়ে ছিল---
আদুরে এক দিঘল সম্মতি সূচক -- হ্যাঁ ।
বুঝতে দেরি হয়নি আমার ।

তারপর….???
পথের বাঁকে নদী বয়ে গেছে অন্য ঠিকানায় ,
তানপুরার তার কবে গেছে কেটে
সহসা এঁকে দিলে আমাদের মাঝে
সে এক আকাশ - মাটি দূরত্ব ।

আমার পঁচিশটা বসন্ত মেঘ মেখে
ঝরে গেছে, আমলকী বনের ভেতর দিয়ে
রাধাচূড়া আর কৃষ্ণ চূড়ার গা'বেয়ে ,
তোমার নামের আকাশটা আমার কাছে
সে যেন এক হলদে পাতার দলিল ।

আমি যখন স্বাধীনতা পড়ে নিই
আকাশ গঙ্গার মেঘদলে ,
তখন তোমার স্বাধীনতার কথাই ভাবি ।
মনে প্রশ্ন জাগে, তোমার স্বাধীনতা
তোমায় পরাধীন করেনি তো….?
তাই জানতে ইচ্ছে করে, ভালো আছো তো..?

আমি যখন সুখ দেখি কাক চক্ষু জলে
ভেসে থাকা কলমী লতার সংসারে---
তখন তোমার সুখী হওয়ার কথা ভেবে
প্রশ্ন জাগে মনে, ভালো আছো তো…?
আমার কবিতার শব্দ মালা
তোমার রঙে রঙিন হলে---
তোমায় খোঁজে ,
আজও এমন কোন কবিতা লিখতে পারিনি,
যা দিয়ে তোমায় সিক্ত করা যায় অশ্রু জলে ।

তোমার ঘর- বর - ঘরকন্না
তোমার আনন্দ সুখ হাসি
সব মিলিয়ে আস্ত এক অজানা পৃথিবী ,
যার ওপর সুন্দর মেহেন্দি আঁকে কল্পনায়
আমার জোছনা ধোয়া কোজাগরী রাত ।

আসলে আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল-----
-- প্রেমিক দেবদারু , পারেনি ।
দেবদাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ,
দাঁড়িয়ে থাকে পরাজিত সৈনিকের মতো
মাথার ওপর উড়ে যায় যে পাখি,
তার ডানায় লেগে থাকে -----
মুক্ত আকাশের গন্ধ ।

তাজমহলের বুকের ভেতর
মমতাজ নারীর কান্নায় যেমন করে
ঝরে যায় হাজারো শাজাহান ,
পলেস্তারা খসে পড়া রোমন্থনী স্মৃতি
জাবর কেটে কেটে আমায় জারিত করে ।

আমি জীবন নদে খেয়া বাই প্রতিকূলে ,
তুমি সংসার মাথায় ক্লান্ত পথিক ,
দাঁড়িয়ে আছো আমার নদী তীরে
পদ্মাবতীর অশ্রুমতি শোলকের মতো
ভাটিয়ালী বাতাসে ভেসে আসে---
ঐ বুঝি তোমার কণ্ঠস্বরে শোনা যায়……
' ও মাঝি, তোমার নায়ে আমায় কি নেবে গো……? '
আমি ঘোর-বেঘোরে বলে উঠি---
জানিনা জানিনা জানিনা……!!!