মেদিনীকথার উৎসর্গ ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়।

ফাইল চিত্র,

সুচিকিৎসক,সফল রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের সার্থক রূপকার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় বাঙালি চিকিৎসা ও বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে তিনি একজন কিংবদন্তী ব্যাক্তিত্ব ছিলেন।

জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্তমান পাটনায় ১৮৮২ সালের ১ জুলাই।প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীর ছোটো ছেলে বাল্যকাল থেকেই পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলেন।মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ওনার মাতৃবিয়োগ ঘটে।পিতার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে মানবসেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন।তিনি পাটনা কলেজ থেকে এফ. এ পাশ করেন ১৮৯৭ সালে।গণিতে বিশেষ আকর্ষণের দরুন গণিতে অনার্স সহ বি.এ পাস করেন।এরপর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এম.এস ও এম. বি পাশ করে এম.এস ডিগ্রি ও পরে এম.ডি ডিগ্রি ও লাভ করেন।উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য লন্ডনের বাথোলোমিউ কলেজে ভর্তি হওয়া একজন ভারতীয় ছাত্র হিসেবে এবং মাত্র দু বছরের মধ্যেই এম.আর.সি. পি(লন্ডন) ও এফ. আর.সি. পি(ইংল্যান্ড)পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া পরবর্তীকালে অন্যান্য ভারতীয় ছাত্রদের এই প্রতিষ্টানে শিক্ষা গ্রহণের দ্বার উন্মোচন করে।

বিলেত ফেরত ডাক্তার তখন বর্তমান রাধাগোবিন্দ কর প্রতিষ্টিত ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য,রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিন ও আমেরিকান সোসাইটি অফ ফিজিসিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কথা মতো স্বরাজ্য পার্টির প্রার্থী হওয়া এবং বিরোধী দলনেতা রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করণের মাধ্যমেই রাজনীতি শুরু।ওনার লক্ষ ছিলো সূর্যের আলোর মতো যেন শিক্ষাও সর্বজনের হয়।তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয় মহাত্মা গান্ধীর ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হবার পর।কলকাতার পুরসভার মেয়র, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠান সহ আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ও শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

কল্যাণীকে কলকাতার বিকল্প হিসাবে গড়ে তোলা সি,দুর্গাপুরের মতো এতো বৃহদ শিলাঞ্চল স্থাপন সহ, খড়গপুর IIT ও D. V. C এর সদর দপ্তর পশ্চিমবঙ্গে স্থাপন ওনার ১৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রী জীবনের কিছু কাজ যার জন্য উনি পশ্চিমবঙ্গের নবরূপকার নামেও পরিচিত।

চিকিৎসক ,শিক্ষক, দেশসেবক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের বাঙালি বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে অবদান অপিরিসীম।ভারতরত্ন সহ নানা সম্মানে ওনাকে ভূষিত করা হয়।১৯৬২ সালের ১ লা জুলাই নিজের জন্মদিনেই তিনি প্রয়াত হন।যা সারাবিশ্বে জাতীয় চিকিৎসক দিবস রূপে পালন করা হয়।ওনার মৃত্যুর পর কলকাতার সল্টলেক ওনার নামে নামাঙ্কিত হয় বিধাননগর।

✍️ অনিমেষ দাস

ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন একজন কৃতি চিকিৎসক , শিক্ষাদরদী ,জনসেবক , ভারতের মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব ভার পালন করেছিলেন। বিধান রায় মানেই আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ নির্মাতা এক কথায় পশ্চিমবঙ্গের রূপকার নামেই ডাঃ বিধান রায় সকলের কাছে পরিচিত । বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং পাঁচটি বিশিষ্ট শহর, দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধাননগর, অশোকেনগর এবং হাবড়া প্রতিষ্ঠায় তাঁর মূল ভূমিকা রায়েছে । তিনি এফ.আর.সি.এস. প্রাপ্ত বেশ কয়েকজনের মধ্যে একজন এবং এম.আর.সি.পি. এক সাথে ডিগ্রি অর্জন করি সফল চিকিৎসক । ভারতে প্রতি বছর ১ লা জুলাই তাঁর স্মরণে জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালন করা হয়ে থাকে । ১৯৬১ সালের ৪ ঠা ফেব্রুয়ারী ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয় ডাঃ বি. সি রায়কে ।

জন্ম :
১ লা জুলাই,১৮৮২ সাল, পাটনা,বিহার ।

প্রয়াণ :
১ লা জুলাই, ১৯৬২ সাল,কলকাতা ।

পিতা- প্রকাশ চন্দ্র রায়
মাতা- অঘোরকামিনী দেবী

বিধান চন্দ্র রায়ের পিতামহ প্রাণকালি রায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর পিতা প্রকাশ চন্দ্র রায় ১৮৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিধান চন্দ্র রায়ের মা অঘোরকামিনী দেবী ছিলেন বহরমপুরের জমিদার বিপিন চন্দ্র বসুর একমাত্র কন্যা।

বিধান চন্দ্র রায় ১৮৮২ সালের ১ লা জুলাই বিহারের পাটনার বঙ্কিপুরে একটি বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রকাশ চন্দ্র রায় একজন আবগারি পরিদর্শক ছিলেন। তাঁর মা, অঘোর কামিনী দেবী ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা এবং একনিষ্ঠ সমাজকর্মী। বিধান চন্দ্রের পাঁচ ভাই,বোনের মধ্যে বিধান চন্দ্র কনিষ্ঠ ছিলেন ,তাঁর দুই বোন, সুসরবাশিনী এবং সরোজিনী এবং দুই ভাই সুবোধ ও সাধন । বিধান চন্দ্রের বাবা আর মা প্রবল ব্রাহ্মসমাজবাদী ছিলেন । বিধান চন্দ্র কঠোর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করেছিলেন । তিনি চিরদিন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জনগনের সেবায় নিবেদিত ছিলেন ।

প্রকাশ চন্দ্র যশোরের বিদ্রোহী হিন্দু রাজা, মহারাজা প্রাদাদাদিত্যের পরিবারের বংশধর ছিলেন, কিন্তু পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে তিনি খুব বেশি সম্পত্তির গ্রহন করেন নি । তিনি মাঝারি বেতনের চাকরি করতেন । সেই বেতন দিয়ে শুধু বিধান চন্দ্র ও তার অন্যান্য সন্তানদের বড়ো করেছিলেন তা নয় তিনি এবং অঘোর কামিনী নিজের সন্তান দের সাথে সাথে বেশ কয়েকজন দরিদ্র শিশুদের বেশিরভাগই অনাথ শিশুদের শিক্ষা ও লালনপালন করেছিলেন।

বিধান চন্দ্র ১৮৯৭ সালে পাটনা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন, আই.এ. কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং বি.এ. পাটনা কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করার পরে তিনি IIEST পূর্বে বিইএসইউ এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনটি উভয় প্রতিষ্ঠানের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল এবং তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যায়নটিকেই বেছে নিলেন এবং নিষ্ঠার সাথে তা চালিয়ে যেতে লাগলেন । বিধান চন্দ্র ১৯০১ সালের জুনে কলকাতা মেডিকেল কলেজে যোগ দিতে পাটনা ছাড়লেন । মেডিক্যাল স্কুলে পড়ার সময় বিধান একটি শিলালিপি নিয়ে এসেছিলেন যাতে লেখা ছিল—-
“আপনার হাত যা কিছু করতে পারে তা আপনার শক্তি দিয়ে করুন।”
এই কথাগুলি তাঁর জন্য আজীবন প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বিধান চন্দ্র যখন কলেজে পড়াশুনা করছে সেই সময় বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা হয়েছিলো । দেশভাগের বিরোধী ছিলেন লালা লাজপত রায়, তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের মতো জাতীয়তাবাদী নেতারা। বিধান চন্দ্র আন্দোলনের প্রতি তাঁর বিশাল টানকে প্রতিহত করেছিলেন। তিনি তার আবেগ, অনুভূতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এবং পড়াশোনার প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি প্রথমে তার পেশায় যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের জাতিকে আরও ভালভাবে সেবা করতে পারবেন।

মেডিসিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করার জন্য সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্যে বিধান চন্দ্র ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন মাত্র ১২০০ ডলার সঙ্গে নিয়ে । তবে সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালের ডিন একজন এশিয়ান শিক্ষার্থীকে মানতে নারাজ ছিলেন এবং বিধানের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিধান রায় তাতে হতাশ হননি তবে তিনি তাঁর জেদ কে কয়েকশ গুন বাড়িয়ে ডিনের কাছে বারবার আবেদন জমা দিতে থাকেন । তিনি ভর্তি হওয়ার জন্যে ৩০ বার ভর্তির আবেদন পত্র জমা করেছিলেন । তাঁর পরে বিধান চন্দ্রকে কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিলো । বিধান চন্দ্র মাত্র দুই বছর তিন মাসের মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেন এবং ১৯১১ সালের মে মাসে এক সাথে রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্সের সদস্য এবং রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনসের সহযোগী হওয়ার বিরল কীর্তি অর্জন করেছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

স্নাতক শেষ হওয়ার পরপরই বিধান চন্দ্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাতে যোগ দেন। তিনি প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং প্রয়োজনে বোধে নার্স হিসাবেও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন । অবসর সময়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করেছিলেন, নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ।

স্নাতকোত্তর শেষে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পরে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং পরে ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল এবং কারমাইকেল মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করেন।

বিধান রায় বিশ্বাস করতেন যে মানুষ সুস্থ সবল না হলে, মনের দৃঢ়তা ও দেহের দৃঢ়তা না হলে স্বরাজ ভারতের স্বাধীনতার জন্য কর্মের আহ্বান একটি স্বপ্ন হিসাবে থাকবে পূর্ণতা পাবে না । তিনি যাদবপুর টি.বি. হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, কমলা নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন (কলেজ) এবং চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল সহ একধিক সামাজিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন । মহিলা ও শিশুদের জন্য চিত্তরঞ্জন সেবা সদন ১৯২৬ সালে চালু করেছিলেন ।

১৯৪২ সালে, রেঙ্গুন জাপানি বোমা হামলায় পড়েছিল এবং জাপানি আক্রমণের ভয়ে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। বিধান রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি স্কুল ও কলেজ ছাত্রদের ক্লাস করার জন্য বিমান আক্রমণ শেল্টার অর্জন করেছিলেন এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্য একইভাবে ত্রাণ সরবরাহ করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৪৪ সালে তাকে ডক্টরেট অফ সায়েন্স প্রদান করা হয়।

বিধান রায় বিশ্বাস করেছিলেন যে ভারতের যুবকরা জাতির ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। তিনি অনুভব করেছিলেন যে যুবকদের অবশ্যই ধর্মঘট ও উপবাসে অংশগ্রহণ না করে বরং অধ্যয়ন করা উচিত এবং সামাজিক কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করা উচিত।
১৯৫৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের ভাষণ দেওয়ার সময় ডঃ রায় বলেছেন —

“আমার যুবক বন্ধুরা, তোমদের চাওয়া, ভয়, অজ্ঞতা, হতাশা এবং অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি-স্বাধীনতার যুদ্ধের সৈনিক। নিঃস্বার্থ সেবার চেতনায় প্রবৃত্ত হয়ে দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি আশা ও সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে পারেন “…

ডঃ বিধান রায় গান্ধীজির বন্ধু এবং ডাক্তার উভয়ই ছিলেন। ১৯৩৩ সালে যখন গান্ধীজী পুনার পার্নাকুটিভিনে উপবাস করছিলেন, তখন ডাঃ বিধান রায় তাঁর কাছে দেখা করতে গিয়েছিলেন। গান্ধীজিকে ঔষধ দিলে তিনি তা খেতে অস্বীকার করেন কারন ঔষধ ভারতে তৈরি হয়নি তাই । গান্ধীজি ডাঃ বিধান রায়কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-

“কেন আমি আপনার কাছে চিকিৎসা করাব? আপনি কি আমার চারশো মিলিয়ন দেশবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করবেন?”

ডাঃ বিধান রায় জবাব দিয়েছিলেন –

“না গান্ধীজি, আমি সব রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে পারবোনা তবে আমি এসেছি … মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর চিকিৎসা করার জন্য নয়, আমার কাছে যারা আমার দেশের চারশো কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে” তাঁকে ” চিকিৎসা করার জন্য।” তারপর গান্ধীজিকে ঔষুধ খাওয়াতে লাগলেন এবং গান্ধীজিও ঔষধ খেতে সংকোচ করলেন না ।

ডাঃ বিধান রায় ১৯২৫ সালে রাজনীতিতে প্রথম প্রবেশ করেছিলেন। তিনি ব্যারাকপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং “বাংলার গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান,” সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন। স্বতন্ত্র হলেও তিনি স্বরাজ পার্টির ১৯২০ এর দশকে কংগ্রেসের সংসদীয় শাখা দিয়ে ভোট দিয়েছিলেন।

১৯২৫ সালের প্রথমদিকে ডাঃ বিধান রায় হুগলির দূষণজনিত কারণগুলির বিষয়ে অধ্যয়নের সুপারিশ করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন এবং ভবিষ্যতে দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ।

ডাঃ বিধান রায় ১৯২৮ সালে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নিজেকে অন্যের শত্রুতা ও কোন্দল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখার চেষ্টা করে ছিলেন এবং নেতাদের উপর গভীর গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করেছিলেন। ডাঃ বিধান রায় ১৯২৯ সালে দক্ষতার সাথে বাংলায় নাগরিক অবাধ্যতা পরিচালনা করেছিলেন এবং পন্ডিত মতিলাল নেহরুকে ১৯৩০ সালে তাকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য (সিডাব্লুসি) মনোনীত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সিডাব্লুসিটিকে একটি বেআইনী সমাবেশ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং বিধন রায়কে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিধান রায়কে ২৬ শে আগস্ট ১৯৩০ সালে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিলো ।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ১৯৩০ সালে ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন দিল্লি থেকে।
তারপর তাঁকে আনা হয় কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। জেলে ওই সময় বন্দি ছিলেন বর্ধমানের এক গান্ধীবাদী শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য। বিজয়বাবু লিখেছেন, তিনি বর্ধমান জেলে থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। সর্বক্ষণ জ্বর থাকত। এই সময় তাঁকেও আনা হয় আলিপুর জেলে।

বিধান রায় জেলে এসেছিলেন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। সাধারণত এটা করা যায় না, কিন্তু সম্ভবত বিধান রায়ের ব্যক্তিত্বের সামনে ওঁরা না বলতে পারেননি। ফলে ডাঃ বিধান রায়ের ডিউটি পড়ল জেলের হাসপাতালে।

কিছু দিনের মধ্যেই বোঝা গেল জেলে রোগীর মৃত্যুসংখ্যা কমে গেছে। নিউমোনিয়া, টাইফায়েড ইত্যাদি কিছু কঠিন অসুখের ওষুধ জেলে থাকত না, সে সব বিধান রায় তাঁর দাদা সুবোধ রায়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে নিজের টাকায় আনাতে শুরু করলেন।

প্রায়ই দেখা যেত ছ’ফুট ছাড়ানো লোকটা স্টেথো গলায় দিয়ে জেলের হাসপাতালে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন, পেছন পেছন চলেছেন জেলের সরকারি ডাক্তার।

গান্ধীবাদী সেই শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বিধানবাবু চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার বিছানার পাশে বসলেন। মিনিট কয়েক চেয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর অসুখ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। মুখের দিকে তাকালাম। একটু যেন চিন্তিত বলে মনে হল। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে মুখখানা আবার প্রফুল্ল হয়ে উঠল। হেসে বললেন, ‘কিছু না। সেরে যাবে।’ মনে হল এর মধ্যেই অসুখের সব কিছু বুঝে ফেলেছেন।
বিজয়কুমার ভট্টাচার্যই এরপর জানিয়েছেন, কোনও রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে বিধান রায় কিছুক্ষণ সেই রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। সেই অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি রোগ নির্ণয় করতেন।

ওই জেল হাসপাতালে তখন ১১০ জন রোগী। একদিন জেলের ডাক্তার বঙ্কিমবাবু (উপাধি লেখেননি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য) কোনও কারণে আসতে দেরি করছেন। বিধান রায় একাই এক এক করে ১১০ জন রোগীকে দেখলেন। তার পর ছুটতে ছুটতে বঙ্কিমবাবু এসে হাজির। কাঁচুমাঁচু মুখে বন্দি বিধান রায়কে বলছেন, স্যার একটু দেরি হয়ে গেল। বিধান রায় হেসে বললেন, না না ঠিক আছে, রোগী আমি দেখে নিয়েছি, আপনি ওদের টিকিটগুলো আনুন, পথ্য আর ওষুধটা আমি বলে দিচ্ছি।

বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, আধঘণ্টা আগে দেখা ১১০ জন রোগীর প্রত্যেকের জন্য ওষুধ, পথ্য প্রায় মুখস্থ এক এক করে বলে গেলেন ডাঃ বিধান রায়। এমনই অসামান্য স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর।

বিধান রায় জেলে থাকাকালীন পেয়ে গেলেন বন্দি কানাই গাঙ্গুলিকে। কানাইবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডক্টরেট করেছিলেন জার্মানি থেকে। খুব ভালো জার্মান ভাষা জানতেন তিনি। তিনি বরিশালের শঙ্কর মঠের স্বামী প্রজ্ঞানন্দের বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। পরে গ্রেফতার হন ব্রিটিশ পুলিশে হাতে।

এই কানাই গাঙ্গুলির কাছে জেলের ভিতর বিধান রায় শুরু করলেন জার্মান ভাষা শেখা। এই নিয়ে কানাইবাবু লিখেছিলেন, ছ’মাস জেলে থাকাকালীন বিধান রায় একদিনও বাদ দেননি জার্মান শেখার ক্লাস। এবং যখন জেল ছেড়ে চলে গেলেন, তখন তাঁর এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেছে।

১৯৩১ সালে ডান্ডি মার্চ চলাকালীন কলকাতা কর্পোরেশনের অনেক সদস্যকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। কংগ্রেস বিধান রায়কে কারাগারের বাইরে থাকতে এবং কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করেছিল। তিনি কর্পোরেশনের অল্ডারম্যান এবং ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত কলকাতার মেয়রের দায়িত্ব ভার পালন করেছিলেন। তাঁর অধীনে কর্পোরেশন নিখরচায় শিক্ষা, নিখরচায় চিকিৎসা সহায়তা, উন্নত সড়ক, উন্নত আলো ও পানীয় জল সরবরাহ সম্প্রসারণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তিনি হাসপাতাল ও দাতব্য চিকিৎসালয়গুলিতে বিনামূল্যে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি উন্নত পরিকাঠামো স্থাপনের জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন।

পরবর্তী কালে কংগ্রেস পার্টি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে ডাঃ বিধান রায়ের নাম প্রস্তাব করেছিল। ডাঃ বিধান রায় রাজি ছিলেন না তিনি তাঁর নিজের পেশায় নিজেকে আরো বেশি নিয়োজিত রাখতে চেয়েছিলেন। তবে গান্ধীজীর পরামর্শে ডাঃ বিধান রায় তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসে গান্ধীজির পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৪৮ সালের ২৩ শে জানুয়ারী দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছিলেন গ্রহণ করেন।
পূর্ব পাকিস্তান গঠনের প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, খাদ্যের অভাব, বেকারত্ব এবং শরণার্থীদের বিশাল প্রবাহের ফলে সে সময়কার বাংলা ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ডাঃ বিধান রায় দলের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা এনেছিলেন। তারপরে তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং শান্তভাবে সারা বাংলা জুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করলেন।

বিধান চন্দ্র রায়, হলেন এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী যিনি সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী চাচা নেহেরু কে ” তুমি” সম্বোধন করে ডাকতেন…. আর বিধান রায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব সময়েই বাংলার প্রকৃত উন্নয়নের জন্ম হয়, তার হাতেই গড়ে উঠেছিলো লবনহ্রদ থেকে আজকের বিধাননগর, কিংবা দুর্গাপুর, হলদিয়া, অশোকনগর, কল্যানীর মতো আধুনিক শহর….কোলকাতা মেট্রো রেলের জন্মও হয় সেই বিধান রায়ের হাত ধরেই…. আফশোস একটাই বিধান রায়ের পর বাংলা আর এমন মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী আর পেলো না।

চিকিৎসা করবেন বলে স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন বিধান রায়।

মুখ দেখে রোগীর চিকিৎসা করতেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়।

১৯৬১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ডাঃ বিধান রায়কে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৬২ সালের ১ লা জুলাই তাঁর ৮০ তম জন্মদিন সকালের রোগীদের চিকিৎসা করার পরে তিনি “ব্রহ্মগীত” একটি অনুলিপি নিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে একটি টুকরো গেয়েছিলেন। তাঁর ঠিক ১১ ঘন্টা পরে ডাঃ বিধন রায়ের প্রয়াণ ঘটে ।
তিনি তাঁর মা অঘোরকামিনী দেবীর নামে একটি নার্সিংহোম চালানোর জন্য তাঁর বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি পাটনায় সমাজসেবা চালানোর জন্য তাঁর সম্পত্তিগুলির জন্য একটি ট্রাস্টও গঠন করেছিলেন ।

বি.সি. রায় জাতীয় পুরষ্কার ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রায়ের স্মৃতিতে এবং ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর পুরষ্কার দেওয়া হয়। পুরষ্কারটি চিকিৎসা,রাজনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য এবং চারুকলার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয় । ডাঃ বিধান চন্দ্র শিশু স্মারক গ্রন্থাগার এবং শিশুদের জন্য নতুন বইয়ের ট্রাস্ট, শিশুদের পাঠের ঘর ১৯৬৭ সালে খোলা হয়েছিল ।
ভারত সরকার ১ লা জুলাই দিনটিকে চিকিৎসক দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছেন ।

🇮🇳 জাতীয় চিকিৎসক দিবস

প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ভারতরত্ন ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও প্রয়াণ বার্ষিকীতে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।

সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
ব্যবত্তারহাট, নন্দকুমার, পূর্ব মেদিনীপুর

🙏 যদি আপনি আপনার গ্রাম বা শহরকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার এলাকার তথ্য আমাদের কাছে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে যোগ দেন আমাদের সাথে, তথ্য পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন দের কাছে, আপনার তথ্যটি বিবেচনা করে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেজ ও গ্রুপে।💐

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত হতে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করুন 👈⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️🔽⬇️
আমাদের 👨‍💻 ওয়েবসাইটের ঠিকানা 👇
https://www.MEDINIKOTHA.in
আমাদের 🎦 ইউটিউবের ঠিকানা 👇
https://www.youtube.com/c/MEDINIKOTHA
আমাদের 🖼️ ইনস্টাগ্রামের ঠিকানা 👇
https://www.instagram.com/medinikotha
আমাদের 🤳 ফেসবুক গ্রুপের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/medinikotha
আমাদের 🚻 ফেসবুক গ্রুপ কাঁথি মহকুমা ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/groups/contaigroup
আমাদের 🚀 টেলিগ্রাম গ্রুপের ঠিকানা 👇
http://t.me/medinikotha
আমাদের ✈️ টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঠিকানা 👇
https://t.me/medinikatha
আমাদের 📧 ই-মেইল ঠিকানা 👇
medinikotha.contai@gmail.com
আমাদের 🗃️ কাঁথি পেজের ঠিকানা 👇 https://www.facebook.com/ContaiSubdivision
আমাদের 📖 দীঘা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/DighaOldNew
আমাদের 📝 এগরা পেজের ঠিকানা👇
https://www.facebook.com/Egra2
আমাদের 📒 রামনগর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Ramnagar4
আমাদের 📔 হেঁড়িয়া পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Henria
আমাদের 📕 খেজুরী পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Khejuree
আমাদের 📙 নাচিন্দা পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/NachindaMa
আমাদের 📙 তাজপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Tajpoor
আমাদের 📓 শংকরপুর পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Sankarpoor
আমাদের 📃 সাতমাইল পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Satmile
আমাদের 📄 পেটুয়াঘাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Petuaghat
আমাদের 🗒️ দেউলীহাট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Medinikotha6
আমাদের 📘 জুনপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Junput2
আমাদের 📗 বাঁকিপুট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Bakiput
আমাদের 📚 মান্দারমনি পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/Mandarmanee
আমাদের 🛰️ ওয়েবসাইট পেজের ঠিকানা 👇
https://www.facebook.com/medinikotha.in

Social Share

অনুসন্ধান !!

এখনকার খবর !!

1 thought on “মেদিনীকথার উৎসর্গ ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়।”

Leave a Reply to Pinki Sinha Cancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *